বিচারাধীন কোনও বিষয় নিয়ে কোনও বিচারপতি সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিতে পারেন না বলে সোমবারই অভিমত প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কয়েক মাস আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
তার প্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আদালত কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে ওই ইন্টারভিউ তিনি দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে শুক্রবারের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টা বাদে, মঙ্গলবার ভরা এজলাসে মুখ খোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এদিন প্রথমার্ধে এজলাসে বসেননি।
বেলা ২টো নাগাদ দ্বিতীয়ার্ধে এজলাসে বসে অন্য একটি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রসঙ্গক্রমে নিজেই মুখ খোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকার যখন দিয়েছি, উত্তর আমি দেবো। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারের কপি এখনও আপলোড হয়নি শুনলাম। অর্ডার আসুক। উত্তর দেবো।’
এরপর তাঁর সংযোজন, ‘প্রথমার্ধে বসিনি। আমাকে দিয়ে ইস্তফা দেওয়াও হয়ে গেল! শুনছি, কেউ কেউ রটাচ্ছে, আমি নাকি ইস্তফা দিচ্ছি! আমি পদত্যাগ করছি না। যে লড়াই শুরু হয়েছে, সেই লড়াই চলবে।’ ইস্তফা নিয়ে কে বা কারা গুজব রটাচ্ছেন, লড়াই-ই বা কী নিয়ে, তা অবশ্য বিচারপতি খোলসা করেননি। তবে তিনি এও বলেন, ‘আমি থাকি, বা না-থাকি, লড়াই চলবে। কোনও মানুষ সারা জীবন পদে থাকেন না। আমার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে বেশ কিছু আইনজীবী ভুল বোঝাচ্ছেন।’ কোন আইনজীবীরা, কী নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন–বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তারও উল্লেখ করেননি।
এদিন তাঁর এজলাসে বেশকিছু বিচারপ্রার্থীকে দেখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা মুখ শুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ মামলাকারীদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আপনি চলে যাবেন শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।’ জবাবে বিচারপতি বলেন, ‘কেউ চিরস্থায়ী নন।’ তবে তিনি এও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না।
মামলাকারীদের ভিড়ের মধ্যে থেকে জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার মধ্য দিয়ে ভগবান এসেছেন।’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘আমি ভগবান নই।’ কয়েকজন মহিলা মামলাকারীও দাঁড়িয়েছিলেন এজলাসে। বিচারপতি তাঁদের কাছ থেকে জানতে চান, তাঁদের সমস্যা কী। এক মহিলা জানান, তাঁর থেকেও অনেক কম নম্বর পাওয়া প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের চাকরি চুরি গিয়েছে। অনেকে জমি বাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। বিচারপতি সব শুনে মন্তব্য করেন, ‘তাহলে চোর ধরুন। বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রাখুন।’