শনিবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে একজন সরকারি কর্মীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। যদিও সিবিআই সূত্রে খবর, তালিকায় আছেন এমন অন্তত তিন জন। এর মধ্যে আছেন শিক্ষা দপ্তরের সচিবালয়ের দুই কর্তা, প্রাথমিক পর্ষদের এক বিশেষ সচিব। এ ছাড়াও নিচুতলার কয়েক জন সরকারি কর্মীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব শুনেও অবশ্য এ দিন ‘অত্যন্ত ধীর গতিতে তদন্ত চলছে’ বলে মন্তব্য করে সিবিআইকে ২১ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছেন বিচারক।
জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে এ দিন আদালতে হাজির করা হয় ধৃত কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল এবং নীলাদ্রি ঘোষকে। সওয়াল জবাবের শুরুতেই সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। রিমান্ড দেখে তিনি বলেন, ‘সেই তো একই জিনিস। রিমান্ডে একজনের নাম আছে। তিনি কোথায়? মামলার ডেভেলপমেন্ট কোথায়?’ বিচারক জানান, তিনি এ দিন আর কিছু বলবেন না। তাঁর কথায়, ‘রোজই তো একই আবেদন করছেন। এ বার যা বলার আমার পেন বলবে!’ পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশে বলেন, ‘দুটো কেস ছাড়া বাকি কেসগুলো হোপলেস। যাকে টাকা দিয়েছে, সে হেফাজতে নেই কেন?’
একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, একটি কেসে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের অনেকে অন্য মামলাতেও অভিযুক্ত। তা সত্ত্বেও কেন এঁদের সেই মামলাগুলোয় হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে না? বিচারকের এই বক্তব্য শুনে সিবিআইকে চেপে ধরেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। রিমান্ডের কপিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি, নতুন কোনও অভিযোগও যুক্ত করা হয়নি বলে জানান তাঁরা। একটা সময়ে সিবিআইকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘এই ভাবে এই লোকগুলোকে কতদিন আটকে রাখব?’
নীলাদ্রি এবং কুন্তলের মামলা প্রসঙ্গেই উঠে আসে সরকারি অফিসারদের ভূমিকার কথা। সিবিআইয়ের কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, ‘বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে। এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, টাকাগুলো কোথায় গেল? আমি সব সাক্ষীর জবানবন্দি নিচ্ছি। একজন সরকারি অফিসারের নাম রয়েছে। তিনি প্রোটেক্টেড পার্সন। তদন্ত চলছে।’ এই অবস্থায় অভিযুক্তরা জামিন পেলে মামলার গোটা চিত্র বদলে যাবে বলে তাঁর দাবি।
তাঁর মক্কেলের পক্ষে অতিরিক্ত মেধাতালিকা তৈরি করা সম্ভব নয় জানিয়ে কুন্তলের আইনজীবী বলেন, ‘যাঁরা নিজেদের পদ অপব্যবহার করলেন, সিবিআই তাঁদের গ্রেপ্তার করুক। এই মামলায় জড়িত পাবলিক সার্ভেন্টরা কোথায়?’ সিবিআই ফের জানায়, তাঁদেরও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। তখনই বিচারক বলেন, ‘অত্যন্ত ধীর গতিতে তদন্ত হচ্ছে। যে সব সরকারি আধিকারিক এই মামলায় জড়িত, তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে না কেন? ২১ দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি দেখান। বৃত্ত সম্পূর্ণ করুন।’
সিবিআই সূত্রের দাবি, সরকারি অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে অনেকটা এগিয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক ‘মিডল ম্যান’ ও ‘এজেন্ট’-এর থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বিকাশ ভবনের যোগসাজশে চলেছে দুর্নীতি চক্র। এই সূত্রেই শিক্ষা সচিবালয়ের দিকে নজর পড়ে সিবিআইয়ের। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন এই সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুই আধিকারিক দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন। তা না হলে এজেন্টদের পক্ষে বিকাশ ভবনে ঢোকা সম্ভব ছিল না বলে দাবি সিবিআইয়ের।
এ ছাড়া ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বের সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক বিশেষ সচিবের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের দাবি, আর একটু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারলেই দুর্নীতিতে জড়িত অফিসারদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
এ দিনই আবার সিবিআই সূত্র জানিয়েছে, কাল, সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে অন্তত ১০ জন অযোগ্য চাকরি প্রার্থীকে তলব করা হয়েছে। তাঁদের থেকে মানি ট্রেইলের হদিশ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কার কাছে টাকা দেওয়া হয়েছিল, কত টাকা দেওয়া হয়েছিল- এ সবই জিজ্ঞাসা করতে চান তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের থেকে তথ্য জেনে সরকারি অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের দিকেও এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
কারণ সিবিআইয়ের মতে, এই দুর্নীতিতে একদিকে ছিলেন অযোগ্যরা। অন্যদিকে এই সরকারি আধিকারিকরা। মাঝে সেতুর কাজ করেন কুন্তল, তাপসদের মতো এজেন্টরা। সওয়াল-জবাব শেষে তিন অভিযুক্তকেই ১২ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক।