অনাহারের কালো অতীত পিছনে ফেলে আমলাশোলের ‘উৎসারিত আলো’ এখন লক্ষ্মীপ্রিয়া। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের আমলাশোল লক্ষ্মীপ্রিয়াকে আশ্রয় করে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে। তিনিই গ্রামের প্রথম মহিলা যিনি সরকারি চাকরি পেলেন। ‘অনাহারের গ্রাম’ তকমা ভুলিয়ে শিক্ষার আলোয় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি।

গ্রামের প্রথম মহিলা সরকারি চাকুরে লক্ষ্মীপ্রিয়া মুড়া। বর্তমানে বেলপাহাড়িরই সরকারি হাসপাতালের নার্স তিনি। অনাহারের গ্রামে নিত্য অভাব-অনটনে কঠিন ছিল জীবনযুদ্ধ। দুবেলা দু মুঠো অন্ন যোগানোর পাশাপাশি অভাবের সংসারে পড়াশোনা বিলাসিতা হলেও দাঁতে দাঁত চেপে সে যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। এ গ্রামের গর্ব তিনি।

Jhargram Police : কোচিং দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা, লক্ষ্যভেদে সাফল্য ঝাড়গ্রামে

প্রাণান্তর জীবনযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে লক্ষ্মীপ্রিয়া বলেন, ”একসময় অনুন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছিল আমাদের গ্রাম। গ্রামে কোনও স্কুল নেই। দূরে সাইকেলে করে বেলপাহাড়ির স্কুলে পড়তে যেতাম। এখন তো তাও রাস্তা হয়েছে তখন তাও ছিল না।” লক্ষ্মীর আশা, তাঁকে দেখে গ্রামের পরবর্তী প্রজন্ম পড়াশুনায় আগ্রহী হবে। জীবন যুদ্ধে হার না মেনে তিনি যেভাবে বিজয়ী হয়েছেন গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও হবে। তাঁর মতে, গ্রামের বহু ছেলে মেয়ের প্রতিভা আছে। সরকারি সাহায্য পেলে ওরাও অনেক প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। বর্তমানে লক্ষ্মীপ্রিয়া বেলপাহাড়ী ব্লকের বালিচুয়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নার্স।

হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা লক্ষ্মীপ্রিয়ার। অভাবের মধ্যেই কাটে শৈশব থেকে যৌবন। বাবা চাষের কাজ করে সংসার চালাতেন। পাতে ঠিক মতো ভাত না পড়লেও পড়ার জেদ ছাড়েননি লক্ষ্মী।

West Bengal Latest News : বাঁকুড়ার গ্রামে দোতলা ঢালাই করলেই নেমে আসে মৃত্যু! গ্রামবাসীদের দাবি ঘিরে রহস্য

সেই জেদ নিয়েই ২০১০ সালে মাধ্যমিক, ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। এরপর ভর্তি হন নার্সিং কলেজে। সেই শুরু। তারপর একের পর এক ধাপ পেরিয়ে কলকাতার একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে ট্রেনিং নেন লক্ষ্মীপ্রিয়া। পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিলেন তিনি। গ্রামে ইন্টারনেট নেই। তাই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেটিরিয়ালের জন্য ৩০ কিমি দূরে বেলপাহাড়ির বাজার এলাকা অবধি যাতায়াত করতেন রোজ। সেখানেই চলত ইন্টারনেট ব্যবহার করে পড়াশোনা। এত অধ্যবসায়ে সাফল্য ফাঁকি দেয়নি।

International Karate Championship : আন্তর্জাতিক ক্যারাটেতে জোড়া সাফল্য নদিয়ার, জাপান থেকে ব্ল্যাক বেল্ট নিয়ে দেশে ফিরলেন বাবা-ছেলে

লক্ষ্মীপ্রিয়ার লড়াই ও তাঁর সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা গ্রাম। বিয়ের পর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্বামী সুনীল মুড়াও। বলেন, ”ওঁর সাংঘাতিক পরিশ্রম আমার নিজের চোখে দেখা। একেক সময় শরীর হাল ছেড়ে দিত কিন্তু হার না মানা জেদ ওকে সাফল্য এনে দিয়েছে।” লক্ষ্মীপ্রিয়ার উৎসাহে তাঁর স্বামী সুনীলও এখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু সুনীল নন, ছোট থেকে বড় আমলাশোলের সকলের জন্য এখন অনুপ্রেরণা লক্ষ্মীপ্রিয়া মুড়া। বেলপাহাড়ির তৃণমূল সংগঠনের দাবি, লক্ষ্মীপ্রিয়ার উন্নতির পিছনে অবদান রয়েছে শাসকদলের। রাজ্য সরকারের দেওয়া সরকারি প্রকল্পের কল্যাণেই উন্নতি করেছে আমলাশোল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version