এই সময়, শিলিগুড়ি: বয়স মাত্র বাইশ। সুদর্শন। ইংরেজি-হিন্দিতে চোস্ত। আলঝাই কুরাপাট-এর নেশা দেশের বড় বড় মেট্রো শহরে ঘুরে বেড়ানো। পেশা অবশ্য হাতসাফাই। পুলিশের ভাষায়, ‘একেবারে তৈরি ছেলে’। বুধবার রাতে তাঁকে শিলিগুড়ির একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে প্রথমে হকচকিয়ে যান পুলিশকর্তারা। বেঙ্গালুরুর করিতকর্মা ওই যুবকের কথাবার্তায় ‘অপরাধী’ ভাবতেই কষ্ট হয় তাঁদের। তবে কি কোনও ভুল হচ্ছে?

Darjeeling Tourism: পর্যটকদের জন্য সুখবর, টাইগার হিলে যাওয়ার ঝক্কি শেষ! বড় সিদ্ধান্ত
সিকিম পুলিশের সঙ্গে থাকা ছবি মিলিয়ে অবশেষে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। তাঁর ঘর তল্লাশি করে উদ্ধার হয় এক পর্যটকের খোওয়া যাওয়া দু’টি মোবাইল, নগদ টাকা এবং কয়েক লক্ষ টাকার অলঙ্কার। বৃহস্পতিবার সিকিম পুলিশ ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে গ্যাংটকে নিয়ে যায়। ধৃতকে জেরা করে দেশের অন্যান্য মেট্রো শহরগুলোতে তাঁর কীর্তিকলাপের হদিশ করতে চায় পুলিশ।

Sikkim Tourism: দ্বিগুণ গাড়ি ভাড়ার ছ্যাঁকা, সিকিম থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন পর্যটকেরা
জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে গ্যাংটকে বেড়াতে এসে এক পর্যটকের দু’টি মোবাইল ও পার্স হাতসাফাই করে আলঝাই চম্পট দেয় শিলিগুড়িতে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার রাতে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানা সেবক রোডের একটি হোটেল থেকে ওই করিতকর্মাকে বমাল গ্রেপ্তার করেছে।

প্রাথমিক ভাবে শিলিগুড়ি পুলিশ ধৃত যুবকের গুণপনার যে নমুনা পেয়েছে, তাতে বোঝা গিয়েছে, কোনও ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড হাতে পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়া তাঁর কাছে কয়েক মিনিটের খেল। যে কোনও মানুষকে বাক্‌চাতুর্যে মুগ্ধ করে বোকা বানানোটাও তার কাছে কোনও কঠিন কাজ নয়। একই হোটেলে থাকার সুবাদে গ্যাংটকের ওই পর্যটকের সঙ্গে কয়েক মিনিটেই আলাপ জমিয়ে ফেলেছিলেন ওই যুবক।

Changu Lake : উত্তরে শিলাবৃষ্টি, ছাঙ্গুতে বরফ
তবে ‘অপারেশন’ জন্য কয়েকটা দিন সময় নেন। তার পরে পর্যটকের মোবাইল আর মানিব্যাগ হাতসাফাই করে সোজা হাজির শিলিগুড়িতে। এখানে সেবক রোডের একটি হোটেলে ওঠেন অজয়। পর্যটকের ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে প্রথমেই শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি নামী দোকান থেকে তিন লক্ষ টাকার অলঙ্কার কিনে ফেলেন।

Darjeeling First Female Pilot : পেঁজা মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলবেন দার্জিলিংয়ের সাক্ষী
তার পরে দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এক আত্মীয়কে ৫৪ হাজার টাকা ধারও দিয়ে দেন। পুলিশের অনুমান, ক্রেডিট কার্ড ভাঙিয়ে আরও হয়তো খরচের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তার আগে বুধবার গ্যাংটক থানার তদন্তকারী অফিসারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ভক্তিনগর থানা তল্লাশিতে নামে। এলাকার হোটেলগুলিতে খোঁজ নিয়ে গিয়ে অজয়ের হদিশ মেলে। এত দ্রুত পুলিশ হোটেলের রুমে ঢুকে পড়ে যে এ বার আর পালানোর সময়ে পায়নি।

তবে এর আগে দিল্লি, মুম্বই, গোয়া কিংবা মুসৌরিতে থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও অজয়ের টিঁকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। ধরা পড়ার আগেই এলাকা ছেড়ে অন্য মেট্রো শহরে পাড়ি দিয়েছে। সর্বত্রই হাতসাফাইয়ের কৌশল সেই একই। প্রথমে কোনও পর্যটককে টার্গেট করা। তার পরে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। শেষ পর্যন্ত পর্যটককে নিঃস্ব করে দিয়ে গা ঢাকা দেওয়া।

জেরায় অজয় জানিয়েছেন, দু’বছর আগে তাঁর বাবা এবং মা মারা যান। তার পরেই সে বেঙ্গালুরু ছেড়ে বার হয়ে পড়ে। ভক্তিনগর থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘একটা শিক্ষিত ছেলে কেন এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ল সেটা স্পষ্ট নয়। যেহেতু গ্যাংটক থানা ঘটনার তদন্তে নেমেছে, তাই যুবকের বয়ান খতিয়ে দেখবেন সেখানকার তদন্তকারী অফিসারই। ধৃতের বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে কী অভিযোগ রয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version