প্রসেনজিৎ বেরা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন বার্তা পেয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড কোন পথে চলতে চাইছে, তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বাংলায় তৃণমূল বিরোধিতার লাইন থেকে সরে গিয়ে জোড়াফুলকে সমর্থন করলে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে সমর্থন করার বার্তা দিয়েছেন মমতা। দেশের অন্তত ২০০ আসনে যেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির মূল লড়াই হতে চলেছে, সেখানে কংগ্রেসের পাশে জোড়াফুল থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

মমতার এই সমর্থন বার্তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ কংগ্রেস নেতারা প্রকাশ্য বিবৃতিতে তির্যক হলেও কংগ্রেস হাইকমান্ড তাঁদের অবস্থান জানায়নি। তবে কর্নাটকের হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার মমতার বক্তব্যকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। কংগ্রেস ও তৃণমূলের সমীকরণ আচমকা এই নতুন মোড় নেওয়ায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট নেতৃত্ব জল মাপতে শুরু করেছে।

Mamata Banerjee : ‘স্যাক্রিফাইস’ করলে তবেই সমর্থন পাবে কংগ্রেস: মমতা
কারণ সদ্য সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট করে ভোটে লড়াই করে তৃণমূলকে পরাজিত করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে জোট আরও মজবুত করতে সিউড়িতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও অধীর চৌধুরী যৌথসভা করেছেন। জেলায় জেলায় বাম-কংগ্রেসের যৌথ মিছিল ও প্রচার চলছে। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের থেকে লোকসভা নির্বাচন বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ, তা সিপিএম নেতৃত্ব ভালো ভাবেই জানেন।

TMC Congress Alliance : মমতার জোটবার্তায় নজর রেখেও চুপই বঙ্গ বিজেপি
মমতার সমর্থন বার্তাকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস হাইকমান্ড যদি পশ্চিমবঙ্গে নতুন পথে হাঁটতে চায়, সেক্ষেত্রে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্ল্যান বি তৈরি রাখতে চাইছে। সিপিএম পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কোন রাজ্যে কী রণকৌশল গ্রহণ করবে তা এআইসিসি ঠিক করে। এক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা। আমরাও ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি। সমস্ত সম্ভাবনা মাথায় রেখেই নির্বাচনী রণকৌশল তৈরি করা হবে।’

মমতার সমর্থন বার্তার পরে কংগ্রেস হাইকমান্ড যদি তৃণমূল নেত্রীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেই সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য। কারণ আনন্দ শর্মা, পি চিদম্বরম, অভিষেক মনু সিংভি প্রমুখ এআইসিসির প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা অনেকেই পুরোনো যোগাযোগের কারণে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করেন বলে কংগ্রেস নেতাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ।

Dilip Ghosh : ‘নিজের দমে কি কুলাচ্ছে না?’, কংগ্রেসকে সমর্থনের মন্তব্যে মমতাকে কটাক্ষ দিলীপের
তাঁরা মমতার সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষে সওয়াল করতে পারেন বলেও এই নেতারা মনে করছেন। এই তথ্য বাম নেতৃত্বের অজানা নয়। যদিও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে নির্বাচনী লাভ-লোকসানের অঙ্কই বড় হয়ে দাঁড়ায়।

রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের লক্ষ্য বিজেপির শক্তি হ্রাস করা। তাই যে দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করলে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি ফায়দা হবে, সেই দলের হাত কংগ্রেস ধরতেই পারে। এখন দর কষাকষিতে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে তৃণমূল কতগুলি আসন ছাড়বে সেটা এই সমঝোতার মূল ফ্যাক্টর হতে পারে।’

Karnataka Result Abhishek Banerjee: ‘ভারত জোড়ো নিয়ে বলা মুশকিল’, কর্নাটক জয়ের কৃতিত্ব রাহুলকে দিতে নারাজ অভিষেক?
মমতা অবশ্য তাঁর বার্তায় বাংলায় কংগ্রেসকে কোনও আসন ছাড়ার ইঙ্গিত দেননি। বরং বাংলায় যেহেতু তৃণমূল শক্তিশালী, তাই জোড়াফুলকে কংগ্রেসের সমর্থন করা উচিত বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তার পরেও তৃণমূল বাংলায় কংগ্রেসকে কয়েকটি আসন ছেড়ে যদি সমঝোতায় পৌঁছয়, সেই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই বিকল্প নির্বাচনী কৌশল তৈরি রাখতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলে বামেরা নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ-এর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা আরও দৃঢ় করতে পারে তৃণমূল-বিরোধী সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version