নারায়ণ সিংহ রায়: ৯ মাস পর মৃতদেহ ফিরছে নিজের দেশে। শনিবার সন্ধ্যাবেলায় ফুলবাড়ির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শুধুই কান্নার রোল। দু দেশের সহযোগীতায় পরিবার অবশেষে খুঁজে পেলে নিজের পরিজনকে। তবে সে আর জীবিত নয়। লাশ ফিরল দেশে। পরিবার সুত্রে জানাযায় ,  বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের কাহার পাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালাম। বয়স ৩২। নয় মাস ধরে তার কোন খোঁজ পায়না পরিবার। পরিবারে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। পেশায় আব্দুস পাথর ভাঙার কর্মী। নিখোঁজের অভিযোগ পঞ্চগড়ে পুলিশের কাছে দায়ের করা হলেও আব্দুসের কোন হদিস মেলেনা ৷ তবে হাল ছাড়েনি পরিবার। পরিবারের দাবি, যারা নিত্যদিন সীমান্ত এপার ওপার করে ব্যাবসায়িক কাজে তাদের কাছে আব্দুসের খবর মেলে। তবে সে আর জীবিত নেই। শেষ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে পরিবার। নিজের দেশে নিয়ে এসে পরিবারের হাতে মাটি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশ প্রশাসনকে। তবে আইনি জটিলতায় তা আটকে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধার্থে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলার জলপাইগুড়ি জেলার মানবাধিকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক কর্মীরা সাথে যোগাযোগ করেন তারা। তারা ফুলবাড়ির ইন্দো-বাংলা সীমান্তের বিএসএফের সাথে  যোগাযোগ করে আব্দুসের মৃতদেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে শনিবার জলপাগুড়ির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে কফিন বন্দি মৃতদেহ বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনীর মাধ্যমে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফুলবাড়ি সীমান্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয় । অন্যদিকে জিরো পয়েন্ট থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। 

তবে কি করে আব্দুস মারা গেলে। সে ভারতে আসলই বা কি করে। সে প্রসঙ্গে কেউই সেভাবে কোন তথ্য দিতে পারেনি। পুলিশ সুত্রে খবর ,  নয় মাস আগে আব্দুস ভারতের রাজগঞ্জের বড়ুয়া পাড়া এলাকায় এলাকাবাসীদের হাতে ধরা পড়ে। গরু পাচারকারী সন্দেহে গন পিটুনি দেওয়া হয় আব্দুসকে। কোন প্রকার পরিচয় না পাওয়ায় সেই থেকেই বেওয়ারিশ লাস হিসেবেই জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকে আব্দুস।

ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের কাহাড় পাড়ার পঞ্চায়েত মহম্মদ মিন্টু কামাল জানান ,  “ভুল করে ভারতে প্রবেশ করে আব্দুস। ভারতের জনগন ভুল করে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে৷ বিভিন্ন লোক মারফত আমরা এই ঘটনা জানতে পারি। এখানকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ,  যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন ,  তাদের সাথে যোগাযোগ করি৷ মানবিক স্বার্থে তারা এগিয়ে আসেন। আমরা বাংলাদেশের হাইকমিশনকে বিষয় টি জানাই ,  তারা ভারতের হাইকমিশনারকে জানায়। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় আজ নয় মাস বাদে আমরা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছি।”

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবজ সংগঠনের সদস্যা মোফাজ্জল হোসেন জানান ,  “আমরা ঘটনাটা জানার পর পুলিশ ,  বিএসএফ সকলের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের সাহায্য করে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ হয়। তারা ঘটনা আমাদের জানায়৷ তাদের আবেদন ছিল ,  মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আজকে সেই পক্রিয়া সম্পন্ন। যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক। কিন্তু এটুকু ভেবে শান্তি লাগছে যে শেষ পর্যন্ত সে নিজের দেশে ফিরে পরিবারের হাতে মাটি পাবে।”

অন্যদিকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার ডক্টর কল্যান খান কে ফোন করলে তিনি জানান ,  “নয় মাস আগে রাজগঞ্জ থানার পুলিশ নিয়ে এসেছিল আব্দুসের মৃতদেহ। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবেই মর্গে ছিল। তবে আজ সমস্ত আইনি জটিলতা কাটিয়ে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গয়েছে।”

আরও পড়ুন, Bengal Weather Today: ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বাংলায়, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির নতুন স্পেল

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version