চম্পক দত্ত: নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে এলাকায় দু-দুটি পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তা। এমনই অভিযোগ তুলে সরব এলাকাবাসী। সরকারি নিয়ম না মেনে কোটি টাকা ব্যয়ে দু-দুটি রাস্তা নির্মাণের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি এলাকাবাসীর। এলাকাবাসীর থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতও। সঠিক নিয়ম মেনে রাস্তার কাজের দাবিতে বিক্ষোভও দেখায় এলাকার মানুষজন। ঘটনায় শোরগোল চন্দ্রকোণার কৃষ্ণপুরে। এলাকাবাসী নয়, কিছু স্বার্থাণ্বেষী মানুষ সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে পালটা দাবি করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর এলাকা। জানা গিয়েছে, ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর ও সাউবেড়িয়া এই দুই গ্রামে দুটি পৃথক পথশ্রী প্রকল্পে ঢালাই রাস্তা নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। একটি কৃষ্ণপুরে ইয়াসিন খানের বাড়ি থেকে মুক্তার বাঁধ পর্যন্ত ১.৭১০ কিমি ঢালাই রাস্তা। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫,০৫,৬৬৮ টাকা। অপরটি সাউবেড়িয়া থেকে হাবিবুল্লাহ শেখের বাড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,৪২,৪২৭ টাকা।
সম্প্রতি ওই দুই রাস্তার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার সংস্থা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুটি রাস্তার কাজেই সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না। রাস্তার কাজের জন্য শুরুতেই ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। গ্রামের বেলাল মোরাম রাস্তা ড্রেসিং করে তার উপর বিছানো হচ্ছে কাদামাটি যুক্ত মোরাম ও অব্যবহৃত ইঁট এবং যৎসামান্য বালি। এর উপর হবে ঢালাইয়ের কাজ।অভিযোগ শুরুতেই এভাবে রাস্তার কাজ করা হলে সেই রাস্তা বেশিদিন টিকবে না। ফের বেহাল হয়ে পড়বে রাস্তা। আর এই আশঙ্কা থেকেই ওই দুই এলাকার মানুষজন একত্রিত হয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়।
ইতিমধ্যে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছে গ্রামের মানুষজন এমনটাই দাবি তাদের। পাশাপাশি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা কাজ শুরুর বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। ওই দুই রাস্তার সাথে পার্শ্ববর্তী হুগলি জেলার যেমন সংযোগ রয়েছে তেমনই কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় এলাকার কৃষকদের কাছেও ওই রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম বলে দাবি এলাকাবাসীর। ফলে সঠিক মালপত্র দিয়ে ভালোভাবে যাতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ঢালাইয়ের কাজ করা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন তারা। এরই সাথে বেশকিছু বাসিন্দা অভিযোগ করছেন নতুন এই রাস্তার কাজে দুর্নীতি রয়েছে, সেই দুর্নীতি ঢাকতেই যেনতেন প্রকারে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে এলাকার মানুষজন কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভও দেখায় ওই রাস্তার উপরে। কীভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে রাস্তায় বিছানো সামগ্রী খুঁড়ে দেখান ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এবিষয়ে ব্লক প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এবিষয়ে তৃণমুল পরিচালিত ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ইকবাল সরকার জানান,”পথশ্রী প্রকল্পের কাজ জেলা পরিষদের তত্বাবধানে হয়,এলাকার মানুষ আমাদেরকে জানিয়েছে। আমরাও চাইব যাতে সঠিক গুণগত মান বজায় রেখে কাজটা হয়, আমরা বিডিও সাহেবকে জানিয়েছি তিনি বিষয়টি দেখছেন।” পথশ্রী প্রকল্পের নির্মাণকারী সংস্থা হিসাবে দায়িত্ব ভার থাকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির। এই দুই রাস্তার ক্ষেত্রে নির্মাণকারী সংস্থা হিসাবে দেখানো হয়েছে চন্দ্রকোনা-২ পঞ্চায়েত সমিতিকে। এবিষয়ে চন্দ্রকোনা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ বলেন,কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে ব্লক প্রশাসন বা পঞ্চায়েত সমিতিকে জানাক। তিনি পাল্টা বলেন,ওই এলাকায় কিছু স্বার্থাণ্বেষী লোক রয়েছে যারা এভাবে সরকারি বিভিন্ন কাজে বাধা দিয়ে ঠিকাদার সংস্থার থেকে টাকাপয়সা দাবি করে থাকে। এমন কিছু হলে তা বরদাস্ত করা হবেনা। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হলে লিখিত অভিযোগ করুক। সরকারি ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন, তাঁরা যাচাই করে দেখবেন।
আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী নির্বাচনের অভিযোগ, তৃণমূলে তুঙ্গে গোষ্ঠীকোন্দল