স্নেহাশিস নিয়োগী
রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে ক্যাম্পাসের কাজকর্ম সংক্রান্ত সাপ্তাহিক রিপোর্ট রাজভবনে পাঠানোর ব্যাপারে এপ্রিলের গোড়ায় নির্দেশ দিয়েছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এক মাস কেটে গেলেও হাতে গোনা ক’জন বাদে বাকি উপাচার্যরা সেই রিপোর্ট না দেওয়ায়, গত ১৯ মে রাজভবন থেকে তাঁদের ফের চিঠি দিয়ে বিষয়টি মনে করানো হয়। তারপরও সাড়া না পেয়ে আচার্য-রাজ্যপালের তরফে উপাচার্যদের কার্যত শো-কজই করা হলো।

Bratya Basu : রিপোর্ট নিয়ে তলবি চিঠি বোসের, ফের প্রশ্ন ব্রাত্যর
মঙ্গলবার উপাচার্যদের চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপালের বরিষ্ঠ বিশেষ সচিব। আচার্যের নির্দেশ কেন পালন করা হয়নি, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে সেখানে। পশ্চিমবঙ্গর ইতিহাসে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে এমন ঘটনা অভূতপূর্ব বলে মনে করছে শিক্ষামহল। আচার্য-রাজ্যপালের তরফে এই চিঠি রাজ্য-রাজভবন সংঘাতকে কার্যত নতুন মাত্রা দিল বলে মনে করছেন অভিজ্ঞদের অনেকে। একাধিক উপাচার্যের কাছ থেকে শো-কজ নোটিসের কথা জানতে পেরে রাতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

Kazi Nazrul University : উপাচার্যের অপসারণ নোটিশ সঠিক নয়, মন্তব্য হাইকোর্টের
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিধি অমান্য করে রাজ্যপালের এই আচরণ আইনসঙ্গত কি না, সে প্রশ্ন আছেই। উনি কেন বারবার এমন করছেন, সে জন্য ওঁকে শো-কজ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।’ রাজ্যপালের বিশেষ সচিবের পাঠানো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে – বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম মসৃণ ভাবে সম্পন্ন করা, পড়ুয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অংশীদারদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবেই এই রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

Calcutta High Court : আচার্য মুখ্যমন্ত্রী, জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে
কিন্তু রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ উপাচার্যের স্পষ্ট বক্তব্য – ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বরের বিধি মেনে সরাসরি উপাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না আচার্য-রাজ্যপাল। ওই বিধি অনুযায়ী আচার্য বা তাঁর অফিসের তরফে উপাচার্যদের কোনও নির্দেশ ও পরামর্শ দিতে হলে, তা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমেই যেতে হবে। আবার, উপাচার্যরাও এ ক্ষেত্রে কোনও রিপোর্ট বা উত্তর দিতে হলে সরাসরি রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। তাঁদেরও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে রিপোর্ট ও নিজেদের প্রয়োজনের কথা জানাতে হবে।

Online College Admission : অভিন্ন পোর্টালে নয়া শিক্ষানীতির কোর্সে ভর্তি? সংশয়ে অধ্যক্ষরা
এই বিধি লঙ্ঘন করার কারণেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়ের পর বর্তমান আচার্য বোসের ক্ষেত্রেও বারবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে, আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর প্রসঙ্গ। তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন আচার্য। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করতে বলেছে রাজভবনকে।

Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya : কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক, মুখে কুলুপ কর্তৃপক্ষের
এই বিষয়টিই বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে সংশ্লিষ্ট উপাচার্যদের। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রেই খবর, রাজ্যের খান পাঁচেক বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা দপ্তরের ওই বিধি ভেঙে সরাসরি আচার্যকেই সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। এ দিকে, এদিন দুপুরেই সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যান আচার্য-রাজ্যপাল। সন্ধ্যায় আরও একাধিক উপাচার্যের সঙ্গেই শো-কজের চিঠি পান সেই সিধো কানহোর অন্তর্বর্তী উপাচার্য দীপক করও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version