বাসন্তী রাজ্য সড়ক লাগোয়া ঘটকপুকুর চৌমাথার নামী দোকান থেকে গজগজ করতে করতে বেরোলেন মহিলা। তাঁকে শান্ত করতে হিমশিম অবস্থা স্বামীর। কী হয়েছে? জানা গেল, দিঘা যাবেন বলে নতুন গামছা কিনতে গিয়েছিলেন। দোকানদার একটা ছোট গামছা দেখিয়ে দ্বিগুণ দাম চাওয়ায় মেজাজ খাট্টা গিন্নির। দোকানে নাকি আর গামছা নেই! সব গামছা ব্যাগে পুরে নিয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলের লোকজন!
ঘটকপুকুর বিচ্ছিন্ন নয়। এই গামছা-সঙ্কট ভাঙড়, বোদরা, পাগলাহাট, ভোজেরহাট, চন্দনেশ্বরের দোকানেও। গরমে লেপ, কম্বল, সোয়েটার, চাদর থেকে রেনকোট, মশারি, লুঙ্গি, টি-শার্ট – সবই মিললেও গায়েব কেবল গামছা। ভাঙড় ও ঘটকপুকুর বাজার মিলিয়ে খান কুড়ি ছোট-বড় কাপড়ের দোকান আছে। হাতে গোনা কয়েকটিতে গামছা থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। এই আকাল কেন? ভাঙড় বাজারের এক কাপড়ের দোকানদার চোখ মটকে বলেন, ‘পার্টির ছেলেরা শ’য়ে শ’য়ে গামছা কিনে যাচ্ছে। হয়তো মুখ ঢেকে অপারেশন চালাতে সুবিধা হবে!’
কথা যে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়, তার প্রমাণ মঙ্গল-বুধবারের ভাঙড়ের চিত্র। দু’দিনই ভাঙড়ের গোলমালে গামছায় মুখ ঢাকা লোকজনের দেখা মিলেছে। পায়ে স্নিকার্স, পরনে জিনস-টি শার্ট আর চোখ বাদে মুখ-গলা-মাথা ঢাকা গামছায়। ভাঙড় ১ বিডিও অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে তেমনই একজনের বক্তব্য, ‘চারদিকে এত সিসিটিভি ক্যামেরা, টিভি চ্যানেলের লোকজন, সে সব থেকে বাঁচতেই গামছা। লাঠি হাতে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এ ছবি ক্যামেরায় পড়লে এলাকায় বদনাম তো হবেই, সঙ্গে রয়েছে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়।’
বোদরা এলাকার এক তৃণমূল নেতা অবশ্য বললেন, ‘বিষয়টা মোটেই এমন নয়। ছেলেগুলো সকাল থেকে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। গামছায় মুখ মুছছে, ঘাম মুছছে। নতুন গামছা পাওয়ার আশাতেও অনেকে ভিড় করেছে।’ কাশীপুর বাজারের গামছা বিক্রেতা নওয়াব আলি মোল্লা বলেন, ‘এখানে বেলডাঙার গামছা বেশি বিক্রি হয়। লাল গামছা ৬০ টাকা আর তিন-চারটে রঙ মেশানো চওড়া পাড়ের গামছা সাধারণত ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু ভোট আসতেই বাজার থেকে গামছা হাওয়া।’
ভাঙড়বাসীর দাবি, মাস্ক, টুপি, সুতুলির বিক্রিও গিয়েছে বেড়ে। কোদালের বাঁট, উইকেট এ সবেরও চাহিদা ভালো। সবই নাকি ‘অ্যাকশন বাহিনী’র কাজে লাগে। ভাঙড় ২-এর এক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, ‘অনেকে দেখছি হঠাৎই মাস্ক পরেছেন। অথচ ঘোর করোনার সময়েও বেশিরভাগ মানুষকেই মাস্ক পরতে দেখিনি।’ ভোগালি ২ পঞ্চায়েতের বিতর্কিত প্রধান মোদাসের হোসেন একবার বলেছিলেন, ‘করোনাকে ভয় পাই না, পুলিশের ভয়ে মাস্ক পরি আমরা।’ সে চিত্রই কি ধরা পড়ছে? প্রশ্ন উড়ছে ভাঙড়-ক্যানিংয়ে।