পার্থ চৌধুরী: পালে বাঘ পড়া বোধহয় একেই বলে। মধ্যরাতে গুজবের বাঘ ঘুরে বেড়াল গোটা বর্ধমান শহরে। ভয় ছড়িয়ে পড়ল ইতিউতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের জেরে এই গুজব। পরে অবশ্য ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয় ওই সমাজমাধ্যমের পেজে। প্রশাসন জানিয়েছে এটা নেহাতই গুজব। এর কোনও ভিত্তি নেই।
আরও পড়ুন-‘এটা কোনও কন্ট্রোল রুম নয় এটা হল একটা পিস রুম’, রাজভবনে বললেন রাজ্যপাল
বর্ধমানের রমনাবাগান মিনি জু-এর এনক্লোজার থেকে চিতাবাঘ বেরিয়ে পড়েছে! রবিবার গভীর রাতে বর্ধমান শহর সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু ফোন যেতে থাকে বন দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে। খাঁচা থেকে কীভাবে চিতাবাঘ বেরিয়ে গেল তা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। আতঙ্কও তৈরি হয় পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এমনকি বাঘ বেরিয়ে যাওয়ার খবর লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তেই বহু মানুষ ভিড় করতে শুরু করেন রমনাবাগান ফরেস্ট এলাকায়। সেখানে দেখা যায় কেউ কেউ হাতে একটা লাঠি নিয়েও এসেছে বাঘের মোকাবিলা করতে! শুরু হয়ে যায় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের তৎপরতা। বনদফতর অবশ্য জানিয়ে দেয় এটা নেহাতই গুজব। চিতাবাঘ বেরিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে রাতেই টর্চ জ্বেলে চিতাবাঘের এনক্লোজারে খোঁজ নেন বনকর্মীরা। সব চিতা ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তাঁরা।
চিতাবাঘ বেরিয়ে পড়ার প্রসঙ্গে রমনাবাগান অভয়ারণ্যের আধিকারিকরা বলেন, এটা সম্পূর্ণ গুজব। কে বা কারা এই গুজব ছড়িয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের ফরেস্টের প্রত্যেক পশু পক্ষীদের থাকার জন্য যে নির্দিষ্ট এনক্লোজার রয়েছে সেগুলো নিশ্চিদ্র এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই ধরনের ঘটনা ঘটার কোন অবকাশ নেই। কোন প্রাণীর পক্ষে ফরেস্টের ঘেরাটোপ ভেঙে বা টপকে বেরোনোর কোন সুযোগ নেই। আমরা সেই ভাবেই ব্যবস্থা করে রেখেছি।
বনকর্মী আব্দুল মাসুদ জানান; আপনারা নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজ সারুন। বাঘের জন্য ফেন্সিং রয়েছে। রয়েছে বিদ্যুৎবাহী পাওয়ার ফেন্সিংয়ের নিরাপত্তা। বর্ধমানের মুখ্য বনাধিকারিক নিশা শর্মা টেলিফোনে জানান; এই গুজবের কোনও ভিত্তিই নেই। তবে কারা এই গুজব ছড়াল তা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়।
বর্ধমান থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী জানান, পুলিসের কাছে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে কোথা থেকে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, রমনার বাগানে একটি মিনি জু’তে বেশ কিছু পশুপাখি রয়েছে। তবে আদৌ কোনো বাঘ নেই। যা আছে তা হল চারটি লেপার্ড বা চিতাবাঘ। কয়েকবছর আগে উত্তরবঙ্গ থেকে আনা ধ্রুব ; কালী আর তাদের দুই শাবক। একটির নাম কৃষ্ণা। অন্যটির নামকরণ করা হয়নি। নয়ের দশকে রমনার বাগানে অজয় কাঁকসা নামে দুই চিতাবাঘ থাকত। একদিন সত্যিই অজয় খাঁচার বাইরে বেরিয়ে গেছিল। এবারে তেমন বিপত্তি কিছু ঘটেনি।