২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির দখলে থাকা একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি । জেলা নির্বাচনী দফতর থেকে জানা গিয়েছে, ২০২৩ এর নির্বাচনে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে আসন বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আসনে রয়েছে ১০০৭টি, ৮টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন রয়েছে ২১০টি এবং জেলা পরিষদে আসন রয়েছে ১৯টি । মনোনয়ন চলাকালীন তৃণমূল পঞ্চায়েত আসনে ১৩২১টি , পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩২৫টি, জেলা পরিষদে ৩১টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সিপিআইএম এর পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত আসনে ৪৩২, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৩৩, জেলা পরিষদে ১৯টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত আসনে ৯৮৯টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৪১, জেলা পরিষদে ২৪টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ায় পিছিয়ে নেই নির্দলরাও। নির্দলের সিংহভাগ রয়েছে কুড়মিরা। এছাড়াও রয়েছে তৃণমূলের গোজ প্রার্থী ও বেশ কয়েকটি নির্দল ।
উল্লেখ্য , ২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ভালো ফল করে ছিল বিজেপি । ৮৯টির মধ্যে ২০টির বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল করে নেয় বিজেপি। কিন্তু, এবার বিজেপির দখলে থাকা একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি । গোপীবল্লভপুরের কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়ানা ৪ নম্বর সংসদে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি । যে সংসদের ভোটার খোদ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ।
অপরদিকে, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার ঝাড়গ্রাম বিধানসভার রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার বিজেপির সাংসদ কুনার হেমব্রাম। কুনার হেমব্রাম যে বুথে ভোট দেয় সেই কিসমৎ ভরতপুর সংসদে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। কারণ খতিয়ে দেখা গিয়েছে, বিজেপি কিসমৎ ভরতপুর সংসদে কখনওই প্রার্থী দিতে পারেনি। এছাড়াও, সাঁকরাইল ব্লকের বিজেপির দখলে থাকা রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২টি আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি । রগড়া ও আঁধারি গ্রাম পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে তৃণমূল । রগড়া ও আঁধারি মিলিয়ে ২১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন এবং ৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল । কারণ খতিয়ে দেখা গিয়েছে,২০১৮ পঞ্চায়েতে রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির বোর্ড গঠন হলেও দু’বছরের মাথায় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে যোগদান করে । যার ফলে বিজেপির সংগঠন একেবারেই দুর্বল হয়ে যায় রগড়া এবং আঁধারি এলাকায় । যদিও বিজেপি দাবি করেছিল, তৃণমূলের লোকজন পুলিশকে দিয়ে রাতের অন্ধকারে বিজেপির ঠিক করা প্রার্থীদের ভয় দেখানোর ফলেই তারা কেউ মনোনয়ন জমা দেয়নি। এই অভিযোগ তৃণমূল অস্বীকার করে সাফ জানিয়েছে, নিজেদের সংগঠন নেই তাই ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে। মনোনয়ন পর্ব শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে বলে ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রাম ।শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া করার জন্য জেলার ডিএম, এসপি ,বিডিও ,আইসিদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, ২০১২ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশই সংগঠন দুর্বল হয়ে যায় বিজেপির । পরিবর্তন করা হয় জেলা সভাপতিকে এবং জেলার বিভিন্ন পদে বদল আনা হয় । এছাড়াও বিজেপির একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা ধাপে ধাপে তৃণমূলে যোগদান করে । উপযুক্ত পদ না পাওয়ায় একাধিক বিজেপির সক্রিয় কর্মী দল থেকে দূরত্ব বজায় রাখে । যার ফলেই বিজেপি বহু জায়গায় পঞ্চায়েতের প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে । কুনার হেমব্রাম অবশ্য মানছেন, সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে তা আলোচনা করা হচ্ছে । গেরুয়া শিবির থেকে উপজাতি আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ঝাড়গ্রামে জোড়াফুলের বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় জয়লাভের জন্য শাসকের ধমক চমকের রাজনীতিকে দায়ী করলেও, শাসক পালটা বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই এই সমীকরণের জন্য দায়ী করেছেন। সেক্ষেত্রে শাসকের দাবি, তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডের দেওয়া কথার কোনও খেলাপ হয়নি।
চলবে…