অর্ণবাংশু নিয়োগী: পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রবল গোলমাল হয়েছিল। বিরোধীদের তরফে অভিযোগ করা হয়, মনোনয়ন জমা দিতে তাদের বাধা দিচ্ছে শাসক দল। শুধু তাই নয়, অভিযোগ করা হয়েছিল, মনোনয়ন পত্রের নথি বিকৃতিও করা হয়েছে। এনিয়ে সিবিআই তদন্তেরও দাবি তুলে মামলা হয় কলকাতা হইকোর্টে। সেই মামলার বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। এবার সেই রায় খারিজ করে দিল হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন-ভাঙড়ে সংঘর্ষ, নওশাদ সিদ্দিকি-সহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা পুলিসের
নথি বিকৃতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। ওই আদেশের পর মামলা ওঠে ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই তদন্তের সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। পরিবর্তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নথি বিকৃতি নিয়ে তদন্ত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে।
আদালতের যুক্তি নথি বিকৃতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার যৌক্তিকতা তেমন নেই। যে অভিযোগ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণে রাজ্য পুলিস এনিয়ে অনুসন্ধান করবে। কিন্তু তাদের মাথায় থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির একক কমিশন। ওই কমিশনের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে। অনুসন্ধানের জন্য ৩ সপ্তাহ সময়ে পাবে কমিশন।
গত ২১ জুন পঞ্চায়েত মনোনয়নের নথি বিকৃত করা অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। অভিযোগ বহু প্রার্থীর মনোনয়নের পর নথি লোপাট করা হয়েছে। পাশাপাশি ছিল মনোনয়নকে ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্ত, খুন, হুমকির বিষয়টি। এনিয়ে সিবিআই নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, একটা নির্বাচনকে ঘিরে এত অভিযোগ কেন? এটা রাজ্যের জন্য লজ্জার। রাজ্য সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা। তা করতে না পারলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ১৯৯৯, ২০০৩ সালে কী হয়েছিল তা বলবেন না। মামলা হচ্ছে,মানুষকে মারধার করা হচ্ছে, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব কী?
উল্লেখ্য, উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লকের ২ বাম প্রার্থী কাশ্মীরা বিবি ও অনুজা বিবি দাবি করেছিলেন তাদের মনোনয়ন পত্র বিকৃত করা হয়েছে। ওবিসি হওয়া সত্বেও চেকলিসস্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে স্ক্রুটিনির সময়ে তাদের নাম বাদ যায়। বিডিওর কাছে গেলেও অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামাননি তিনি। এনিয়ে মামলা ওঠে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। তিনি বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এদিকে এনিয়ে পাল্টা ডিভিশন বেঞ্চে য়ায় রাজ্য সরকার। সেই মামলায় গত ২৩ জুন অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিকে ভাঙড়ে আশান্তির আবহে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি-সহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেছে পুলিস। পুলিস সূত্রে খবর, ঋত্বিক নস্কর নামে এক ব্যক্তি নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। রাজু নস্কর নামে তাঁর এক আত্মীয় খুন হন। তিনি তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় নওশাদ সিদ্দিকি-সহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ অভিযোগ আনা হয়। তার পরেই ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পক্ষে নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে ৩০২ সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়। এর আগে আরাবুল ইসলাম ও তার ছেলে হাকিমুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়ে কী বললেন নওশাদ সিদ্দিকি? ভাঙড়ের বিধায়ক বলেন, আমি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এরকম একটি অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এটা হল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমি সবসময়ই শান্তি ও সৌজন্যের কথা বলি। তার পরেও আমার নামেই খুনের অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমি নাকি মানুষকে মারার জন্য চক্রান্ত করছি। আমার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে পেরে ওরা পেরে উঠছে না। তাই কখনও আমাকে গ্রেফতার করে জেলে রাখার চেষ্টা করছে। কখনও আবার নামে গুজব ছড়িয়ে মানুষের সামনে আমার উপরে কালিমা লেপন করার চেষ্টা করছে। শাসকদলের কর্মীরা আমাকে কখনও আক্রমণ করারও চেষ্টা করছে। অবশেষে আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ এনে খুনের আসামী করা হয়েছে। কোন পথে গেল কী হবে তা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।