এই সময়: একদফায় পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন চেয়েছিল ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। রবিবার পর্যন্ত মাত্র ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কিন্তু একলপ্তে ৮২২ কোম্পানি বাহিনী না-মিললে একদফায় কীভাবে ভোট হবে–রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার কাছে তা জানতে চাইলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

Governor Meet Election Commissioner : রাজভবনে মুখোমুখি রাজ্যপাল-রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, সংঘাতের আবহে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
রবিবার বিকেলে রাজভবনে বোসের সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় ধরে বৈঠক হয় নির্বাচন কমিশনারের। বৈঠকের পরে রাজ্যপাল বা রাজীব কোনও মন্তব্য না-করলেও সূত্রের দাবি, যাতে কমিশনের দাবি মতো বাহিনী পাঠায় কেন্দ্র, তা নিয়ে তদ্বির করার জন্য বোসের কাছে আর্জি জানিয়েছেন রাজীব। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, ২০১৩-এর পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় বেশি বাহিনী এ বার ব্যবহার করা হয়। ওই বছর পাঁচ দফার ভোটে নামানো হয়েছিল ৮২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ বার ভোট হবে এক দফায়। তাতে ৮২২ কোম্পানি একলপ্তে না-পাওয়া গেলে কমিশন ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা করেছে, তা এদিনের বৈঠকে বারবার জানতে চান রাজ্যপাল।

CV Ananda Bose : কমিশনের তরফেই বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে, রাজীব সিনহার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে জানালেন রাজ্যপাল
এরমধ্যে কাল, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। এই বেঞ্চ ছাড়াও হাইকোর্টের আরও কয়েকটি বেঞ্চে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলা চলছে। সেই সব মামলার প্রেক্ষিতে কমিশন ও রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, তার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে হাইকোর্ট। ভোটের দফা বাড়ানো বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ভোটে নজরদারির সংক্রান্ত আবেদনের সিদ্ধান্ত এই রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে।

West Bengal Election 2023 : আজ থেকে রাজ্যে শুরু টহলদারি, আসছে আরও ফোর্স
রাজভবন সূত্রের খবর, রবিবারের বৈঠকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনারের কাছে তা খুঁটিয়ে জানতে চান রাজ্যপাল। কমিশনার রাজ্যপালকে জানান, আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পঞ্চায়েত ভোটের জন্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২২ কোম্পানি এবং পরবর্তী দফায় আরও ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো নিয়ে তারা এখনও কিছু জানায়নি। রবিবার এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে ‘রিমাইন্ডার’ও পাঠিয়েছেন রাজীব। তখন রাজ্যপাল জানতে চান, একলপ্তে চাহিদা অনুযায়ী বাহিনী না পেলে একদফায় কী ভাবে ভোট করবেন?

WB Panchayat Election : আদালতের ধাক্কায় ফিরল হুঁশ! ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে চিঠি কমিশনের
সূত্রের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, হাতে এখনও ১৪ দিন আছে। তিনি প্রয়োজনীয় বাহিনী আনতে কেন্দ্রের সঙ্গে তদ্বির করার জন্য রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন। ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩-কে অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারা অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের অনুরোধে তাঁর কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে তাঁকে সাহায্যের জন্য রাজ্যপাল হস্তক্ষেপ করতে পারেন। এই ধারা অনুযায়ীই রাজ্যপালের সহযোগিতা চান কমিশনার। পাশাপাশি বাহিনী এলে তাদের কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তার রূপরেখাও বোসকে জানান রাজীব। এদিনই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া কো-অর্ডিনেটর বিএসএফ-এর আইজি ও সিআইএসএফ-এর ডেপুটি কমান্ড্যান্টের সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনার। তাও তিনি রাজ্যপালকে জানিয়েছেন।

Meera Pandey: কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে শেষ কথা বলবে রাজ্য ও কমিশন, জানালেন প্রাক্তন কমিশনার মীরা পাণ্ডে
এর আগে রাজ্যপাল এদিন সকালে জানান, তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য নির্বাচন কমিশনার সময় চেয়েছেন। এদিনের বৈঠকে কমিশনকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে রুল বুক মেনে কাজ করার নির্দেশ দেন বোস। তাঁর পরামর্শ, ‘আপনি স্বাধীন ভাবে কাজ করুন। ভোটে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে অশান্তি কোনওভাবেই যেন বরদাস্ত না করা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে।’ মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজভবনে যে ‘পিস রুম’ খোলা হয়েছিল, সেখানে যে সব অভিযোগ এসেছে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপের পরামর্শও বোস দিয়েছেন রাজীবকে।

এই বৈঠকের আগে এদিন সকালে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল বলেন, ‘বাইরে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে যা হচ্ছে, তা ভালো নয়। ডোন্ট আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ কমন ম্যান।’ তাঁর সাফ কথা, ‘সব রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল–প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, তাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন সাধারণ মানুষের জন্যই। তাই সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে উপেক্ষা করবেন না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version