বিবাহিত জীবনের শুরুতেই সমস্যা। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল বছর তিরিশের যুবতীর। সমস্ত কিছু স্বাভাবিক করতে দরকার ছিল একটা জটিল অস্ত্রোপচারের। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তরুণীর ছিল মা আর মহকুমাস্তরের হাসপাতালে সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে কোনও চিকিৎসক এই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চাননি। কিন্তু কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বরূপ দাঁ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন। একইসঙ্গে নতুন জীবন ফিরে পেলেন তরুণী।

মঙ্গলবার মহকুমা স্তরের হাসপাতালেই হল জটিলতম অস্ত্রোপচার। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এই জটিল অস্ত্রোপচারে বছর তিরিশের যুবতী ফিরে পেলেন তার স্বাভাবিক জীবন। জানা যায়, ‘নিওভ্যাজাইনোপ্লাস্টি’ অর্থাৎ কৃত্রিম জননাঙ্গ তৈরির অস্ত্রোপচার সাধারণত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতেই এতদিন সম্ভব ছিল। কিন্তু এদিন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখান কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বরূপ দাঁ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অপারেশনের পর ভালো রয়েছেন রোগী।

Trending News: তিন বাচ্চার পর চতুর্থবারও সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম, সরকারি হাসপাতালে সফল সাংঘাতিক ঝুঁকির অস্ত্রোপচার

জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের বাসিন্দা বছর তিরিশের ওই যুবতীর মাস তিনেক আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই তিনি মূলত কঠিন সমস্যার সন্মুখীন হন। মহিলার দিদি জানান, ‘আমার বোনের খুব ছোটবেলায় জরায়তে টিউমারের জন্য অস্ত্রপচার হয়েছিল। সেই অস্ত্রপচার কলকাতায় করা হয়। বোনের স্বাভাবিক পিরিয়ড হত না। সেটা ওই সমস্যার কারণেই আমরা আগেই জানতাম। কিন্তু বিয়ের পর দেখা যায় অন্য সমস্যা। যা নিয়ে আগে চিকিৎসক আমাদের কিছুই বলেননি। বিয়ের পর ডাঃ বিশ্বরূপ দাঁকে দেখানোর পর বোনের আসল সমস্যা জানা যায়।’

Tamluk Hospital : বন্ধ হচ্ছিল না চোখ-বেঁকে গিয়েছিল মুখ, তমলুকে সরকারি হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচারে সাফল্য

রোগীকে দেখার পরই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসক জানান, ‘ওই রোগীর প্রাইমারি আ্যমিনেরিয়া ছিল। এরপর এমআরআই(MRI) করার পর স্পষ্ট হয় মহিলা এম আর কে এইচ(MRKH) সিনড্রমে আক্রান্ত। অর্থাৎ জন্ম থেকেই তার জননাঙ্গের প্রায় ২/৩ অংশ তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নিওভ্যাজাইনোপ্লাস্টি অপারেশনই একমাত্র রাস্তা। অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তার স্বাভাবিক জননাঙ্গ তৈরি করে দেওয়া। এই অস্ত্রোপচার কাটোয়া হাসপাতালে করার জন্য পরিবারের লোকজনদের প্রস্তাব দিই। তারা রাজি হয়ে যান। তারপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।এখন রোগী সুস্থ। সে সেরে উঠলেই স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন যাপন করতে পারবে।’

Lung Transplant : কিশোরের শরীরে ফুসফুস প্রতিস্থাপন, মহানগরে দ্বিতীয় বার

জানা যায়, মঙ্গলবার প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই অস্ত্রোপচার হয়। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ সুশান্ত বরণ দত্ত বলেন, ‘এটা ভীষণ জটিল অস্ত্রোপচার। মহকুমা স্তরের হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে অস্ত্রোপচার পুরোপুরি সফল হয়েছে।’

তবে চিকিৎসকরা জানান, ওই রোগী তাঁর স্বাভাবিক যৌনজীবন ফিরে পেলেও নিজে গর্ভধারণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তিনি সারোগেসির মাধ্যমে অবশ্যই মা হতে পারবেন। নতুন বিবাহিত জীবনের শুরুটা অন্ধকারময় হলেও অল্পদিনেই আলোর দিশা দেখতে পেয়ে খুশি ওই যুবতীও। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ডাঃ বিশ্বরূপ সহ কাটোয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version