প্রসেনজিত্ সরদার: গতকাল ভোটপর্বের একবারে শেষলগ্নে দক্ষিণ দিনাজপুরের গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল প্রার্থী। পশ্চিম বর্ধমানে শাসকদলের প্রার্থীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। পাশাপাশি ভোট মিটতেই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী। ফের প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর।
আরও পড়ুন-ভোট শেষেও গুলি! জখম তৃণমূল প্রার্থী
গতকাল ভোটের দিন জেলায় জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। ভোটগ্রণন শেষ হওয়ার পরও সংঘর্ষের বিরাম নেই। এদিন সন্ধায় বাসন্তীর জ্যোতিষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধারানীপুর গ্রামে আরএসপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। আহত হন ১০ জন। তাদের মধ্যে মারাত্মক আহত হন আজাদ লস্কর নামে এক ব্যক্তি। তাঁর চোখ মুখে চোট লাগে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসন্তী গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতায়। তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
বাসন্তীতে বিরোধীদের দাবি, ভোটের সময়ে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এনিয়েই এলাকা উত্তপ্ত ছিল। তার পরেই এই সংঘর্ষ। এলকার বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালীন জ্যোতিষপুরে অতর্কিতে আমাদের তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা চালায় বামপন্থী দুষ্কৃতীরা। ওই হামলায় ১০ তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হন আজাদ লস্কর। ক্যানিং হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেথান থেকে তাঁকে কলকাতার চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আজাদ লস্করকে যারা খুন করেছে তাদের গ্রেফতার করেছে তাদের গ্রেফতারের দাবি করছি।
এদিকে, ভোট মিটতেই হাওড়ার আমতার কুশবেড়িয়া অঞ্চলের সারদা এবং আশেপাশের কয়েকটা গ্রামে বিরোধীদের ঘর থেকে টেনে এনে মারধোরের অভিযোগ উঠল। প্রসঙ্গত সারদা গ্রামেই বাড়ি আনিস খানের পরিবারের। গতকালই তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন আক্রান্ত হওয়ার।
গতকাল দক্ষিণ দিনাজপুরের উদয় পঞ্চায়েতে ভোটপর্ব ছিল শান্তিপূর্ণ। দিনভর কোনও অশান্তি হয়নি। অভিযোগ, সন্ধের পর আচমকাই বুথে ঢুকে ব্যালট লুঠের চেষ্টা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গুলি চলে! তারপর? গুলি লাগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নূর আমিন মিঞার বুকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন তিনি ভর্তি গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। এদিকে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুণ্ডিতে কদমডাঙা এলাকা একটি বুথেও ব্যালট লুঠের অভিযোগ ওঠেছে। প্রাণ বাঁচাতে বুথ ছেড়ে পালিয়ে যান অফিসার, ভোটকর্মী, এমনকী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও। শেষবেলায় বুথ দখল করা হয় চেষ্টা হয় গঙ্গারামপুরের রামসাগর এলাকায়।
শনিবার সন্ধেয় এক তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল মালদহের বৈষ্ণবনগরের ভগবানপুরে। নিহত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম মতিউর রহমান। এদিন বিকেলে স্থানীয় বুথের সামনে লাইনে দাঁড়ান মতিউর। অভিযোগ, তাকে ভোট দানে বাধা দেন কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এরপর শুরু হয় বচসা। শেষে ওই তৃণমূল কর্মীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মতিউর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। ততক্ষণে অবশ্য হামলাকারী চম্পট দিয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে, তৃণমূলকর্মীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।