ভবানন্দ সিংহ: ন্যুড ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল। আত্মঘাতী হলেন যুবক। ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া ইকর গ্রামে। ঘটনার তদন্ত করুক পুলিস। দাবি তুলেছেন গ্রামবাসী। ইতিমধ্যেই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। পাশাপাশি ওই যুবকের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিস।
আরও পড়ুন-বর্ধমান স্টেশনের লাগেজ স্ক্যানারে আটকে গেল বাচ্চার হাত, তারপর…
স্থানীয় সুত্রে খবর, মৃত যুবকের নাম সুশান্ত চন্দ্র দাস। সে রায়গঞ্জের একটি বড় বিপনিতে কাজ করতো। শুক্রবার কাজ থেকে বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে শুতে গিয়েছিল। শনিবার সকালে তার শোওয়ার ঘরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পায় পরিবারের লোকেরা। খবর দেওয়া হয় রায়গঞ্জ থানায়। পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মৃত ওই যুবকের ফোনে এদিন সকাল সাড়ে ৮ টার পর থেকে লাগাতার অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসতে থাকে। সেই ফোন ওই মৃত যুবকের পরিবারের লোকেরা ধরলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ৪-৫ হাজার টাকা তাড়াতাড়ি দিতে বলা হয়, নতুবা এক মহিলার নগ্ন ভিডিও কলের সাথে ওই যুবকের ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ফোনের পরই বোঝা যায় কোনও ন্যুড ভিডিয়ো পাঠিয়ে সুশান্তকে ব্ল্য়াকমেইল করা হচ্ছিল।
পরিবারের দাবি, ওই ফোনটি আসার পরই সুশান্তের মোবাইল ঘেঁটে একটি ফেক এডিট করা ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যেই ভিডিও যুবককে একটি হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজে কেউ পাঠিয়েছিল। এর পরেই আরও দেখা যায় মৃত যুবক দেড় হাজার টাকা ওই নম্বরে পাঠিয়েছিল শনিবার। এই সব কিছু দেখেই মৃত যুবকের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দাজ করেছেন ন্যুড ভিডিও পাঠিয়েই ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছিল যুবককে। আর ব্ল্যাকমেইলের চাপে পড়েই আত্মহত্যা করেছে ওই যুবক।
প্রতিবেশী রাজকুমার দাস বলেন, সকালে ফোন পেলাম ও মারা গিয়েছে। একটি মলে কাজ করতো ও। সেখানে কোনও সমস্য়া কিনা, পরিবারে কোনও সমস্যা কিনা। কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওর মোবাইলটি ওর ভাইয়ের হাতে ছিল। হঠাত্ সেটিতে একটি ফোন আসে। ওর ভাই ফোনটা ধরে। ওপ্রান্ত থেকে হিন্দিতে বলা হয়, টাকা পাঠাতে হবে। চার হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। তা না হলে একটি ন্যুড ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়া হবে। তখন আমাদের মনে হল কোনও ব্ল্যাক মেইল করা হয়েছে ওকে। মর্মান্তিক বিষয়। এত ভালো একটা ছেলে চলে গেল।
মৃতের ভাই প্রশান্ত দাস বলেন, কাজ রাতে দাদা সুইসাইড করে। অনেক পরে জানতে পারলাম ওকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছিল। ওকে হাসপাতালে আনার পর ওর ফোনে বারবার ফোন আসে। বলা হয় একটি ন্যুড ভিডিয়ো রয়েছে দাদার। সেটি ভাইরাল করে দেওয়া হবে। দাদার সঙ্গে কারও রিলেশনও ছিল না। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।
রায়গঞ্জের সমাজকর্মী তথা শিক্ষক মৃণালকান্তি সিংহ জানিয়েছেন এই ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝেই সামনে আসছে৷ বেশীরভাগ সময় লজ্জ্বায় কেউ মুখ ফুটে কারুর সাহায্য চাইতে পারেন না৷ ফলে এইরকম সব মর্মান্তিক সব ঘটনা সামনে আসে। আমরা বলবো এই রকম ফাঁদ এড়িয়ে চলাই ভালো। আর যদি কেউ ভুল করে ফাঁদে পা দিয়েও ফেলেন তবে দ্রুত পুলিস প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া উচিত। এখন সব জায়গায় সাইবার ক্রাইম থানা আছে, আর সাইবার ক্রাইম পুলিস এই বিষয়গুলি তে ভালো কাজ করছে।