এই সময়: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত কন্যার গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ‘কভার’ করতে গিয়ে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো গুরুতর ধারায়। পরে তাঁকে জেলে আটকে রাখার জন্য আসরে নামে ইডি-ও। কিন্তু ২৮ মাস বাদে শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্ত হন কেরালার সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। সেই সিদ্দিক রবিবার এসেছিলেন কলকাতায়। এক আলোচনায় শোনালেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ‘নির্মমতা’র কাহিনি।

Nawsad Siddiqui : ভাঙড় যাওয়ার পথে নওশাদের গাড়ি আটকাল পুলিশ! ‘আমি যাবই’ হুংকার ISF বিধায়কের
বছর ৪৩-এর সাংবাদিক জানান, ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর তিনি দিল্লি থেকে হাথরসের উদ্দেশে রওনা হন। আটকানো হয় মথুরা হাইওয়ের উপর একটি টোল প্লাজায়। ইউপি পুলিশ প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, কোথায় যাচ্ছেন? সিদ্দিক হাথরসের কথা জানালে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টোল প্লাজার পাশেই একটি পুলিশ বুথে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়। এরপর সাদা পোশাকের কিছু লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁকে জেরা শুরু করে। ‘প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’-র সচিত্র পরিচয়পত্র, অফিসের আই-কার্ড দেখানোর পরেও রেহাই মেলেনি।

Salman Rushdie : ‘দুঃস্বপ্ন আজও তাড়া করে…’ দাবি রুশদির
সিদ্দিকের কথায়, ‘হাতকড়া পরিয়ে জেরায় সবার আগে আমাকে প্রশ্ন করা হয়, আমি পাকিস্তান ক’বার গেছি?’ এরপর জেরায় পুলিশ তাঁকে নানা অবান্তর প্রশ্ন করতে শুরু করে বলে সিদ্দিকের দাবি। কখনও তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তিনি বিফ খান কি না। কখনও জানতে চাওয়া হয়, তিনি জেএনইউতে পড়েন? জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি উর্দু জানেন কি? উত্তরে হ্যাঁ বলায়, পুলিশের প্রশ্ন ছিল – কোন উদ্দেশ্যে তিনি উর্দু শিখেছেন? সবশেষে তাঁকে বারবার চাপ দেওয়া হতে থাকে এটা জানতে, সিপিএম-ই কি সিদ্দিককে হাথরসে পাঠিয়েছে?

Chhatradhar Mahato : একাধিক কড়া শর্ত! রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণ মামলায় ছত্রধরের জামিন মঞ্জুর
নাকি তিনি মাওবাদী? এমনকী সাংবাদিকের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, তাঁর কোনও গার্লফ্রেন্ড আছে কি না? সিদ্দিকের অভিযোগ, ‘কোনও কারণ ছাড়াই জেরার সময়ে আমাকে থাপ্পড় মারতে শুরু করে পুলিশ। গোটা দিন বসিয়ে রেখে, না খাইয়ে চড় মারতে মারতে একটি গাড়িতে তোলা হয়। সেটিতে বিজেপির ফ্ল্যাগ লাগানো ছিল।’ বিচারকের কাছে বারবার জামিনের আবেদন করেও তা মেলেনি। অভিযোগ, উল্টে তাঁকে সাদা কাগজে জোর করে সই করিয়ে নেয় ইউপি পুলিশ। এবং সব শেষে একটি বন্ধ স্কুলবাড়ির এক চিলতে ঘরে আরও জনা ৫০ জন বন্দির সঙ্গে আটক করা হয়।

Nawshad Siddiqui : ভাঙড়ে প্রবেশের আগেই ফের আটকানো হল নওশাদকে, পুলিশের ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে তুললেন প্রশ্ন
সেখানে শৌচালয়ের ব্যবস্থা ছিল না। ঘরের মধ্যে ২১দিন বন্দি ছিলেন সিদ্দিক। মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য বরাদ্দ ছিল একটি বালতি। নিজেকেই পরিষ্কার করতে হতো সেটা। তখনও জানতেন না, তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ আনা হয়েছে। জেলা বিচারকের আদালতে পেশ করার ২১ দিন বাদে তাঁকে মথুরা জেলে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে তিনি একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক পড়ে জানতে পারেন, পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র মতো কঠোর ধারায় মামলা করেছে। কেরালার এই সাংবাদিকের আক্ষেপ, ‘জেলে ৪৫ দিন থাকার পর আমি ফোনে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারি। সে ক্ষেত্রেও জেল থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, হিন্দিতেই কথা বলতে হবে। নাহলে ইংরেজি। মালায়লাম চলবে না।’

Brij Bhushan Sharan Singh: চিকিৎসার খরচ বহনের বদলে যৌনতা! বৃজ ভূষণের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কুস্তিগিররা
রবিবার দক্ষিণ কলকাতার সুজাতা সদনে ‘পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ’-এর উদ্যোগে ‘নিউজ ম্যাটার্স’ শিরোনামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। সেখানেই সিদ্দিক শোনান দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে কাটানো দুর্বিষহ জেল জীবনের কথা। বলেন, ‘ইউএপিএ মামলায় জামিন পাওয়ার পর ইডি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। আমার ড্রাইভারের এক বন্ধুর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৫,০০০ টাকা ট্রানজাকশন দেখিয়ে দাবি করা হয়, সেটা সন্ত্রাসবাদী কাজের ফান্ড।’

Bank Robbery: হাতে খেলনা পিস্তল, অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে লাখ লাখ টাকা লুঠ ‘ব্যান্ডিড কুইন’-র!
জামিন পাওয়ার পর এখনও প্রতি সোমবার তাঁকে কেরালার স্থানীয় থানায় হাজিরা দিতে হয়। প্রতি ১৪ দিন অন্তর হাজিরা দিতে যেতে হয় লখনউতে। এ সবের ফাঁকে আপাতত অনুবাদের টুকটাক কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বাড়িতে ৯০ বছরের মা, স্ত্রী এবং তিন ছেলেমেয়ে। সিদ্দিকের আক্ষেপ, ‘চাকরির অফার এসেছিল। কিন্তু কখন করব? হাজিরা দেব? না সাংবাদিকতা করব?’ সংবাদমাধ্যম প্রতিনিয়ত যে ভাবে সরকারের ভজনা করে চলেছে, তার বিরুদ্ধেও সরব সিদ্দিক। তাঁর কথায়, ‘সরকারের পা-চাটা মিডিয়ার কাজ নয়। মিডিয়া যদি তার কাজ ঠিক করে করত, তা হলে আমাদের দেশের এই দুরবস্থা হয়তো হতো না!’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version