এই সময়: দলের এক নেতা যা বলেন, অন্য নেতা তার উল্টো বলেন। বিধানসভা ভোটের পর থেকে বঙ্গ-বিজেপিতে এটাই ট্রেন্ডিং। ২০২১-এর ভোটে দলের ভরাডুবির কারণ নিয়ে বাংলার শীর্ষ বিজেপি নেতাদের পরস্পরবিরোধী যুক্তি কার্যত তরজার চেহারা নিয়েছিল। এ বার সরকার ফেলার হুঁশিয়ারি নিয়েও বঙ্গ-বিজেপিতে তাল কেটেছে। দেখা যাচ্ছে, সুকান্ত মজুমদার, শান্তনু ঠাকুরদের দাবির সঙ্গে দিলীপ ঘোষ সহমত নন। শুভেন্দু অধিকারীর অবস্থান আবার কিঞ্চিৎ অন্যরকম। তিনি দিলীপের সুরে সুরও মেলাচ্ছেন, আবার সুকান্তদের উৎসাহ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেসুরে বাজার ট্রেন্ড চলছেই বঙ্গ-বিজেপিতে।

Suvendu Adhikari : ‘বাংলায় ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের অনুকূল পরিস্থিতি আছে’, ফের মন্তব্য শুভেন্দুর
রবিবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর একসুরে দাবি করেছিলেন, পাঁচ-মাসের মধ্যে এ রাজ্যে সরকার পড়ে যাবে! ঘোড়া কেনা-বেচার ইঙ্গিত দিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘বিধায়কদের মনে হতেই পারে এ সরকারকে তাঁরা আর সমর্থন করবেন না।’ পাশাপাশি, রাজ্যে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করার দাবিও তুলেছিলেন তিনি। একসুরে না-বাজার দলীয় ট্রেন্ড বজায় রেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঠিক উল্টো মত জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

Sukanta Majumdar BJP: ‘হঠাৎ করে বিধায়কেরা সমর্থন সরিয়ে নিতে পারে…’, সুকান্তর মন্তব্যে মহারাষ্ট্রের সরকার পতনের ছায়া বাংলায়
তাঁর সাফ কথা, ‘মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার ভেঙে দেওয়া গণতন্ত্র বিরোধী।’ তিনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করলেও বলেন, ‘সম্ভবত বিজেপি কোথাও ৩৫৫, ৩৫৬ ধারা লাগু করেনি। এখন সাধারণ মানুষ এবং আমরা বলছি, ৩৫৫ চাই। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন, মানুষই তো এই সরকারকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে। তাই মানুষের সমর্থন নিয়ে জিতে আসা কোনও সরকার ভেঙে দেওয়াটাও গণতন্ত্রবিরোধী।’ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ইস্যুতে দু’নৌকায় পা-দিয়ে চলার কৌশল নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

Suvendu Adhikari vs Mamata Banerjee : ‘সারদাকাণ্ডে মমতার বিরুদ্ধে প্রমাণ নিয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে CBI দফতরে যাব’, বিস্ফোরক শুভেন্দু
শুভেন্দু রাজ্যে ৩৫৫ ধারাও চান, আবার ভোটে জিতে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাতেও আসতে চান! অর্থাৎ, তিনি সুকান্ত-শান্তনুদের পাঁচ মাসে সরকার পড়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারির বিরোধিতাও যেমন করছেন না, তেমনই দিলীপের গণতান্ত্রিক বার্তার সুরেও সুর মেলাচ্ছেন। সুকান্তদের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে শুভেন্দু সোমবার হাওড়ায় বলেন, ‘আমরা ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করতে চাই। পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন করে ক্ষমতায় আসতে চাই না।’

Suvendu Adhikari vs Debangshu Bhattacharya:’এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, ৩৫৫ লাগবেই…!’ শুভেন্দুর ভিডিয়ো টুইট করে আক্রমণ দেবাংশুর
অন্যদিকে, এদিন বিকেলে বিধানসভা গেটের বাইরে শুভেন্দু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা হিসেবে আগেও বলেছি এখনও বলছি, ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের অনুকূল পরিস্থিতি বাংলায় আছে।’ তাঁর দাবি, গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। শুভেন্দু বলেন, ‘আমি আন্দোলন করে উঠে আসা লোক। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

BJP West Bengal : পঞ্চায়েত হিংসায় মহিলারাও ‘অত্যাচারিত’, ৫ মহিলা সাংসদকে এবার রাজ্যে পাঠাচ্ছে BJP
শান্তিপূর্ণ গণ-আন্দোলন করে কী ভাবে ৩৫৫ ধারার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা যায় তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘যদি আন্দোলন হিংসাত্মক হয়, তবেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তো ৩৫৫-র জন্য দায়ী থাকব আমরাই।’
বিজেপি নেতাদের নিজেদের মধ্যে ঠোকাঠুকি পর্বে সুকান্তও পাল্টা দিয়েছেন দিলীপের। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরকার ফেলে দেওয়ার বিরোধিতা করে যে বার্তা দিলীপ দিয়েছেন, তা দলের মন্তব্য নয়, বলে দাবি করেছেন তিনি। সুকান্তর কথায়, ‘দিলীপদা যা বলেছেন, সেটা ওঁর মত, পার্টির না।’

Debangshu Bhattacharya : ‘আগে বুথ সামলা, তারপর ভাবিস বাংলা’, নাম না করে সুকান্ত-শান্তনুকে জবাব দেবাংশুর
তাহলে পার্টির মত কী? মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনও নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া? মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতা-নেত্রীরা। দলের এক রাজ্য পদাধিকারী শুধু বলেন, ‘সুকান্তদা যা বলছেন, দিলীপদা তার উল্টো বলছেন। শুভেন্দুদার লাইনটা স্পষ্ট নয়। তিনি একবার ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার কথা বলছেন, পরক্ষণেই ৩৫৫-র পক্ষে আওয়াজ তুলছেন। পার্টি লাইনটা ঠিক কী বুঝতে পারছি না। তবে তৃণমূলের যে এ সবে সুবিধা হচ্ছে সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছি।’ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘দিলীপবাবু অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলেন ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে উনি বিজেপিতে বিবেকের ভূমিকা পালন করছেন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version