এই সময়: রাজ্য সরকার তাঁদেরই ফের উপাচার্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে বাধ সেধে আচার্য-রাজ্যপাল নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজেই তাঁরা উপাচার্য হতে পারেননি। তবে এ বার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তের শরিক হতে চলেছেন এঁরা। উচ্চশিক্ষা সংসদই এই প্রাক্তন প্রবীণ শিক্ষা প্রশাসকদের দায়িত্ব দিয়ে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে। যার সূত্রে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত বেশ কয়েক মাত্রা চড়তে পারে বলে শিক্ষা মহলের একাংশের আশঙ্কা। অনেকের এ-ও প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কি এ ভাবে নতুন করে কোনও ‘আমরা-ওরা’র জন্ম হলো!

North Bengal University: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে মনোনীত ওমপ্রকাশ মিশ্র, বিজ্ঞপ্তি উচ্চশিক্ষা দফতরের
রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যা কাঠামো ও নীতি, তাতে উপাচার্যের একার পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নেওয়া সম্ভব নয়। নীতিগত অনেক সিদ্ধান্ত ইসি, সিন্ডিকেট ইত্যাদির মতো সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থাকে নিতে হয়। এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে উপাচার্যদের বাছাই করে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। আর ইসি, সিন্ডিকেটে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা সংসদের পাঠানো সেই প্রাক্তন শিক্ষা প্রশাসকরা, যাঁদের ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য পদে চেয়েছিল রাজ্য। সংসদের মাথায় রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা – ক্ষমতার দুই কেন্দ্রের দ্বন্দ্বে কি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাই হোঁচট খাবে? লাটে উঠবে পঠনপাঠন থেকে নিত্যকাজ?

CV Ananda Bose : ফের মতবদল বোসের, উত্তরবঙ্গে নয়া ভিসি!
এমনিতেই রাজ্যের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনওটিতেই স্থায়ী উপাচার্য নেই। এক-দেড়মাস আগে অস্থায়ীদেরও কার্যকালের মেয়াদ ফুরিয়েছে। রাজ্য তাঁদেরই পদে রেখে দিতে চাইলেও দু’জন ছাড়া বাকি ২৬ জনকে আর ভিসি করেননি রাজ্যপাল। বদলে নিজের সিদ্ধান্তে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য করেছেন ১৩ জনকে। এবং এই ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রতিনিধি পাঠিয়েছে সংসদ।

Governor Of West Bengal : তিন অধ্যাপককে রাজভবনে তলব, ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ?
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা যাদবপুরের শিক্ষক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে উত্তরবঙ্গেরই ইসি-তে পাঠানো হয়েছে। সিধু কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টেও তাঁকে প্রতিনিধি করেছে সংসদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষকে কলকাতারই সেনেট এবং কাজী নজরুলের কোর্টে সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রবীন্দ্রভারতী ও কাজী নজরুলের ইসি-তে পাঠানো হয়েছে।

CV Ananda Bose : নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আবেদন, রাজ্যপালকে মানহানির চিঠি পাঠালেন ওমপ্রকাশ মিশ্র
বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইসি-র সদস্য করেছে সংসদ। সিধু কানহো বীরসার প্রাক্তন উপাচার্য দীপক করকে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিধু কানহো বীরসার ইসি-র সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এক সময়ে যাঁরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার থেকেছেন, তাঁরাই আবার থাকছেন নীতিনির্ধারণে। সে ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ কী ভাবে এড়ানো সম্ভব, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

CV Ananda Bose : এনএসওইউ-র উপাচার্যর ইস্তফা, চিঠি রাজ্যপালকে
যেমন, উচ্চশিক্ষা সংসদেরই প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পবিত্র সরকারের বক্তব্য, ‘রাজ্যপাল অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করলেও রাজ্য সরকার আদালতে যায়নি। তা হলে মনে হয় যে রাজ্য ব্যাকফুটে। সে কারণেই হয়তো রাজ্যপালের নিয়োগ করা উপাচার্যদের উপর নজরদারি করতে এমন পদক্ষেপ সংসদের।’ তাঁর মতে, সংসদের এই প্রতিনিধিরা যথেষ্ট প্রভাবশালী। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বর্তমান অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, দীপক কর অতীতে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান থেকেছেন। রঞ্জন চক্রবর্তী বিদ্যাসাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। বাকিরাও নিজেদের ক্ষেত্রে পরিচিত মুখ।

Visva Bharati University : ‘বিদ্যুতের বেয়াদপি’! ফেসবুকে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে একহাত নিলেন অনুপম
উচ্চশিক্ষা সংসদের আর এক প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তীর কথায়, ‘রাজ্যপাল মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার মতো ভিসি নিয়োগ করছেন। এক ঘণ্টার নোটিসে আগের উপাচার্যকে সরিয়ে অন্য কাউকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ করছেন। সংসদ যাঁদের কোর্ট বা ইসি-তে পাঠিয়েছে, প্রাক্তন উপাচার্য হিসেবে তাঁরা যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। এটা আইনসিদ্ধও। বরং রাজ্যপালের নিয়োগ করা উপাচার্যদের একাংশের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে।’ তবে এ কথা বলেও অভিজিতের আশঙ্কা, রাজ্য-রাজ্যপাল মুখোমুখি বসে সমস্যার সমাধান না করলে সংঘাত তীব্রতর নেবে।

Bhangar Violence : ভাঙড়ের ‘ভায়োলেন্স’-এ পরীক্ষা কী ভাবে! উদ্বেগ
যদিও কোনও আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন সংসদ-মনোনীত প্রতিনিধি রঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি কর্মসমিতির সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে উন্নতি ও অগ্রগতিতে সাহায্য করব।’ বিকাশ ভবনের কর্তাদের একাংশ ‘নজরদারি’র প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁদের দাবি, আশুতোষ ঘোষকে কলকাতার সেনেটে না পাঠিয়ে সিন্ডিকেটে পাঠালে ভালো হতো। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মহলের একাংশের অভিমত, সেনেটের বৈঠক বসে কালেভদ্রে। সিন্ডিকেট বরং অনেক ‘রেগুলার’। তাই ওই কর্তাদের বক্তব্যে বোঝাই যাচ্ছে, আদতে নিত্যকাজে এই প্রতিনিধিদের জড়িত রাখাই উদ্দেশ্য।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version