দিব্য়েন্দু সরকার: পিতা-মাতাহারা এক অসহায় নাবালিকার উপর পাশবিক-অমানবিক অত্যাচার কাকিমার! যে ছবি দেখে বা যে ঘটনার কথা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। চোখের কোণে জল আসতেও বাধ্য। মারধর, না খেতে দেওয়া, জোর করে কাজ করানো, তারপর উপোস করিয়ে রেখে দেওয়া… এখানেই অত্যাচার থেমে নেই। পিঠ সহ প্রায় সারা শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকার পর ছ্যাঁকা! আর সেই ছ্যাঁকায় পুড়ে গিয়েছে গোটা পিঠ। গোটা পিঠে বড় বড় ফোসকা। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও মুখে কিছু বলা যাবে না। কারণ, নইলে ফের অত্যাচার হবে। ভয়ংকর এই ঘটনাটি হুগলির গোঘাটের। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই অভিযুক্ত কাকিমাকে গ্রেফতার করেছে গোঘাট থানার পুলিস। সেইসঙ্গে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে এনে তার থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। শেষে ওই নাবালিকাকে তার মামারবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই নাবালিকার যাতে নির্ভাবনায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করে দেন গোঘাট থানার ওসি। 

বছর ১২ কি ১৩-র ওই নাবালিকার বাবা বেশ কয়েক বছর আগেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। ওই নাবালিকা যখন খুব ছোট তখনই, বছর দশেক আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন ওই নাবালিকার মা। তার আর কোনও খোঁজ নেই। দাদু ও ঠাকুমার কাছেই থাকত ওই নাবালিকা। কিন্তু দাদুও কয়েক বছর হল মারা গিয়েছে। বাড়িতে তাই কাকু-কাকিমার ফাইফরমাশ খেটে কোনওরকমে দিন কাটত গোঘাটের ভগবতী বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পাঠরত ওই ছাত্রীর। ওই নাবালিকার পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলেও, বাড়ির সমস্ত কাজ থেকে দোকান-বাজার সবই তাকে দিয়ে করাত অভিযুক্ত কাকিমা সারদামণি চট্টোপাধ্য়ায়। এমনকি কাজের একটু উনিশ-বিশ হলেই খেতে দেওয়া হত না ওই নাবালিকাকে। উপোস করিয়ে রাখা হত। কিন্তু ভয়ে অত্যাচারের কোনও প্রতিবাদ করতে পারত না সে। বাইরের কাউকেই একথা বলতে পারত না সে। কষ্ট সহ্য করে বাড়িতেই থাকত সে।

মঙ্গলবারও এরকম সারাদিন উপোস ছিল ওই নাবালিকা। সারাদিন-ই তাকে খেতে দেয়নি কাকু-কাকিমা। বিকালের দিকে খিদেতে ছটফট করতে থাকে ওই নাবালিকা। বাধ্য হয়েই খিদে সহ্য করতে না পেরে ফ্রিজ খুলে দুটো মিষ্টি খেয়ে নেয় সে। আর তাতেই কাকিমা সারদামণি চট্টোপাধ্য়ায় পাশবিক  অত্যাচার চালায় ছোট্ট মেয়েটির উপর। মারধরের পাশাপাশি খুন্তি গরম করে পিঠে ছ্যাঁকা দিয়ে দেয়। ছ্যাঁকার পর ছ্যাঁকা দিতে থাকে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে ওই নাবালিকা। পুড়ে যায় পিঠ। পিঠে বড় বড় ফোসকা পড়ে যায়। বুধবার ওই অবস্থাতেই সে বিদ্যালয়ে যায়।

কিন্তু পিঠের বড় ফোসকাগুলি গলে গিয়ে যন্ত্রণা হতে থাকায়, ক্লাসে ঠিকঠাক বসতে পারছিল না সে। তার এই ছটফট ও অস্থিরতা চোখে পড়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার। আর তাতেই সামনে আসে গোটা ঘটনা। ওই নাবালিকাকে জিজ্ঞাসা করে গোটা ঘটনা জানতে পারেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয় থেকেই তিনি গোঘাট থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন গোঘাট থানার ওসি নিজে। অভিযুক্ত কাকিমাকে গ্রেফতার করা হয়। ওদিকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে এনে তার সুস্থ জীবনের বন্দোবস্ত করে দেন।

আরও পড়ুন, Kolkata: বাবার মৃত্যুতে বাড়ি বিক্রি করে হোটলে? রুমে মা-মেয়েকে পাওয়া গেল ভয়ংকর অবস্থায়!

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version