পার্থ চৌধুরী ও প্রসেনজিৎ মালাকার: চলে গেলেন সাধনদাস বৈরাগী। রবিবার ২৩ জুলাই রাতে প্রয়াত হন তিনি। রবিবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে পূর্ব বর্ধমানের আমরুল আশ্রমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কয়েক মাস আগেই ক্যানসার রোগ ধরা পড়ে তাঁর। কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যাও ছিল বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসা চলছিল। পূর্ব বর্ধমানের মুক্তিপুরে তাঁর জন্ম। জীবন জুড়ে সাধনলক্ষ্যে হেঁটেছেন দীর্ঘ পথ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। রেখে গেলেন দেশবিদেশের প্রায় ৫০০ জন শিষ্য-শিষ্যা। সাধনদাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলার বাউল-ফকির মহলে, মুহ্যমান গুণগ্রাহী মহল।
আরও পড়ুন: Uttam Kumar Death Anniversary: মহানায়কের মৃত্যুমাসে বাঙালি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত ৩১টি ‘নতুন’ উত্তম-ছবি…
পূর্ব বর্ধমানেরই প্রথমে হাটগোবিন্দপুরে, পরে আমরুল গ্রামে তাঁর আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন সাধনদাস। তবে জয়দেবের ‘মনের মানুষ’ আখড়ায় মাঝে-মধ্যেই এসে থাকতেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই বাউলশিল্পী নিজেকে ক্রমশ উত্তীর্ণ করেছিলেন এক সাধকের মর্যাদায়। বাউল দেহতত্ত্ব আর মানবপ্রেমের গানই ছিল তাঁর অবলম্বন। এই গানের ভাব ও সুরের হাত ধরেই সদানন্দের হাটে ভ্রমণ করে বেড়াতেন যেন তিনি। তাঁর এই গানসাধন, এই বাউল জীবনযাপন, এই সুরমনন যেন তাঁকে ক্রমশ তাঁর চির-ঈপ্সিত গৌরলোকের দিকে তাঁকে নিয়ে চলেছিল।
বাউলজীবনে জাপানে গিয়ে প্রথম খ্যাতি পান। তারপর নানা জায়গায় তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর গানের টানেই জাপানি তরুণী মাকি কাজুমি চলে আসেন ভারতে। প্রথমে শিষ্যা, পরে তিনি সাধনের সাধনসঙ্গিনীতেও পরিণত হন।
মহাজন বাউল সাধক-গায়ক সাধন বৈরাগী প্রথম জীবনে কমলাকে বিবাহ করেন। পরে তাঁর বাউলজীবনে আসেন মাকি কাজুমি। তাঁকেই নিজের সাধনসঙ্গী করে তোলেন সাধন। মাকি কাজুমা ছাড়াও তাঁর আরও দুই সাধনসঙ্গিনী– কাজুমি ফুকাজাওয়া (শুভ্রা ) এবং সোকো নিশিমুরা (শ্রীতি )।
আরও পড়ুন: বর্ষণমন্দ্রিত অন্ধকার? কলকাতা-সহ কিছু জেলায় ‘শ্রাবণের ধারার মতো’ টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস…
জয়দেবের মেলায় তিনি আসর বসিয়ে জেগে থাকতেন। আদ্যন্ত এক বর্ণময় বাউল সাধক ছিলেন তিনি। কেন্দুলির ‘মনের মানুষ’ আখড়ায় থাকেন তাঁর শিষ্য তন্ময় দাস বাউল ও তার স্ত্রী, সাধন বৈরাগীর শিষ্যা রেখা। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা আমরুলের পথে রওনা দেন। সাধন-শোকে অজয়ের বাতাস যেন কাঁদছে।