অফুরন্ত সাহস আর লক্ষ্যে পৌঁছনোর অদম্য জেদ। সর্বোপরি কঠোর অধ্যাবসায়। এর কাছে সব বাধাই হার মানতে বাধ্য। ঠিক যেমনটা করে দেখালেন শ্রেয়া সিদ্দানাগউদর। ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন দু’টি হাত। তারপরও ২৫ বছরের এই তরুণী এখন সফল ইঞ্জিনিয়ার এবং IIM কলকাতার একজন কৃতী ছাত্রী। কী ভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন তিনি?

২০১৬ সাল। শ্রেয়া তখন সদ্য ১৮-র গন্ডিতে। একটি ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার কবলে পরেন এই তরুণী। বাদ পড়ে তাঁর দু’টি হাত। আর পাঁচজন তাঁর জায়গায় থাকলে হয়তো জীবনের আশাটুকুও ছেরে দিতেন। কিন্তু, একফোঁটাও মনোবল হারাননি শ্রেয়া।

Afghan Singer Hasiba Noori: গুলিতে ঝাঁঝরা না ভুয়ো খবর? পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া আফগান গায়িকাকে ঘিরে রহস্য
আদপে পুনের বাসিন্দা অবাঙালি শ্রেয়ার মনে ছিল অদম্য জেদ আর অফুরন্ত সাহস। পরের বছরই শ্রেয়ার হাত প্রতিস্থাপন হয়। তিনিই প্রথম এশিয় যার শরীরে এই বিরল অস্ত্রপচার হয়। একসঙ্গে দু’টি হাতই প্রতিস্থাপন করা হয় শ্রেয়ার। ২১ বছর বয়সী এক তরুণের ব্রেন ডেথের পর তাঁর হাত বসানো হয় শ্রেয়ার শরীরে।

এই প্রতিস্থাপনের ছয় বছর পর জীবনে নতুন ছন্দ আসে শ্রেয়ার। বর্তমানে সে IIM কলকাতার একজন মেধাবী ছাত্রী।

Rare Surgery: সাইকেল-গাড়ির দুর্ঘটনায় মৃত্যুমুখে কিশোর, বিরল অস্ত্রোপচারে জুড়ল ঘাড় ও মাথা
বিপরীর লিঙ্গের একজনের থেকে নেওয়া হাত প্রতিস্থাপিত হওয়ায় শ্রেয়া সাম্প্রতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্যের অন্যতম উদাহরণ হয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিস্থাপিত হাত দিয়ে লিখতে, খেতে, জামাকাপড় পরতে এবং নিত্যনৈমিত্তিক সমস্ত কাজই করতে পারেন। শৌচকর্ম করতেও কোনও সমস্যা হয় না তাঁর। এমনকী, শ্রেয়ার দাবি, তাঁর হাতের লেখারও কোনও পরিবর্তন হয়নি।

গোটা বিশ্ব জুড়েই হাত প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার বিরল। ভারতে কেবলমাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ এই সার্জারি করিয়েছেন। শ্রেয়া তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মাত্র কয়েক বছর আগেই ভারতে ২৭ বছরের এক যুবকের শরীরে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন করেন পূর্ব ভারতের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। সার্জারির পাশাপাশি সেরে ওঠার পর্বও বেশ জটিল।

Uttar 24 Pargana News : পুরসভার হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচার, দৃষ্টান্ত স্থাপন প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী সেবা সদনের
আর সেই পর্ব অনায়াসেই পার করে ফেলেছেন শ্রেয়া। জুন মাসে তিনি IIM কলকাতায় ভর্তি হন। শ্রেয়ার কথায়, “হাল ছেড়ো না, আশাহত হবে না। এটাই হওয়া উচিত জীবনের মন্ত্র।”

কিন্তু, ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত এখনও শ্রেয়ার স্মৃতিতে টাটকা। তৎকালীন MIT মণিপালের এই ছাত্রী ছুটি কাটিয়ে কলেজে ফিরছিলেন। সে সময় বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। দু’টি হাত কনুই থেকে কাটা পড়ে তাঁর।

শ্রেয়া বলেন, “আমি হাত হারিয়েছিলেন কিন্তু বাঁচার আশা হারাইনি। পা দিয়ে ফোন, ল্যাপটপ, টিভির রিমোট চালাতে শিখে নিয়েছিলাম।”

Health News: জন্ম থেকেই নেই যোনিপথ! অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজীবন নাবালিকার
একসময় প্রসথেটিক হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তা পছন্দ হয়নি শ্রেয়ার। ২০১৭ সালে কোচির অমৃতা হাসপাতালে হাত প্রতিস্থাপনের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় অগাস্ট মাসে ডোনারের ব্যবস্থা হয়। প্ল্যাস্টিক এবং রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জেন সুহ্মমণিয়া আইয়ারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিক্যাল টিম তাঁর অস্ত্রোপচার করে।

দুর্ঘটনার মাত্র এক বছরের মধ্যেই নতুন হাত জুড়ে যায় শ্রেয়ার শরীরে। কিন্তু, জীবনের বাকি দিনগুলো চিকিৎসকদের পরামর্শে সাবধানে থাকতে হবে শ্রেয়াকে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version