এই সময়: পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটে দেশজুড়ে বিজেপির বিপুল জয়ের পিছনে সত্যিই কি কারসাজি ছিল? দিল্লির অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাঙালি অধ্যাপকের গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে রাজনীতির আঙিনায় এনিয়ে বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এদিনই নতুন অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আশঙ্কা, ২০২৪-এর ভোট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বা ভোটযন্ত্র হ্যাক করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

PM Modi : শরিক এমপিদের সঙ্গে মোদীর মিটিং কি দূরত্ব ঘোচাতেই
তিনি জানান, কিছু কিছু প্রমাণও তাঁদের হাতে এসেছে। সেগুলি নিয়ে মুম্বইয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। এরই মধ্যে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএ জোটের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে সতর্ক করে দিয়েছেন, তাঁরা যাতে কেউ বিরোধীদের প্ররোচনায় পা না দেন। এর আগে বঙ্গ-বিজেপির সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বিরোধীরা যতই জোটের নাম পরিবর্তন করুক, তাতে অযথা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও তা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন বলেই জনরোষকে বিরোধীদের প্ররোচনা বলে অভিহিত করছেন।

INDIA Alliance : সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হোক ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ! বিস্ফোরক দাবি BJP সাংসদের
দিল্লি এনসিআর এলাকার অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি সহকারী অধ্যাপক সব্যসাচী দাসের ‘ডেমোক্র্যাটিক ব্যাকস্লাইডিং ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’স লার্জেস্ট ডেমোক্র্যাসি’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি সামনে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘দেশের যে সমস্ত আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বিজেপি জিতেছিল, সেখানে ভোটের ফল অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।’

PM Modi : ‘মুসলিম বোনেদের থেকে রাখি পরুন’, NDA সাংসদদের বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
ওই অধ্যাপক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জেতা আসনগুলিতেই বুথস্তরে কারসাজি করা হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তিনি। ভোট পর্যবেক্ষকদেরও কাজে লাগানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, ‘এই ফলাফল গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কাজনক।’ যদিও এই গবেষণাপত্রে ডিসক্লেমার হিসাবে বলা হয়েছে, ‘এই গবেষণা জালিয়াতির কোনও প্রমাণ নয়। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কারচুপি হয়েছে, এমন ইঙ্গিতও দেয় না।’

Mamata Banerjee Vs Amit Shah : ‘ইন্ডিয়া জিততে চলেছে!’ শাহর মন্তব্যকে ‘সমর্থন’ করে মন্তব্য মমতার
গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের পরে নানা মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। গবেষণার তথ্য সামনে আসার পরে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের টুইট, ‘মারাত্মক অভিযোগ। এই দাবি খণ্ডন করার মতো যদি নির্বাচন কমিশন বা ভারত সরকারের কোনও উত্তর থাকে, তাহলে তা অবিলম্বে এবং সবিস্তারে জানাক।’ পাল্টা বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে টুইটে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এবার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অর্ধসত্য গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে কোনও ব্যক্তি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বদনাম করতে পারেন?’

এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকেও এই প্রসঙ্গটি ওঠে। মমতা তখনই ২০২৪-এ বিজেপির পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ওরা প্ল্যানিং এখন থেকেই করছে। ইভিএম হ্যাক করার নানা রকম ব্যবস্থা করছে। আমাদের কানেও সেই কথাবার্তা এসেছে। আমরা কিছু প্রমাণও পেয়েছি। কিছু খুঁজছি। এই বিষয় নিয়ে মুম্বইয়ের বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হবে।’ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়।

Mamata Banerjee : শাহি বৈঠকে কী প্ল্যান, ফাঁস করলেন মমতা
নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব তা নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের ঢাক পিটিয়েছিলেন। পুলওয়ামার ঘটনায় মোদী তাঁকে চুপ করে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের তদানীন্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। সেই বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার মমতা নতুন দাবি করলেন যে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘কারচুপি’ করতে চাইছে বিজেপি। যদিও বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর সাফ বক্তব্য, ‘তৃণমূলের কোনও অভিযোগের কোনও গ্রহণযোগ্যতা এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে নেই। বাংলার মানুষ সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখেছে। দখলদারি, খুন, রক্তপাত, শিশুমৃত্যু দেখেছে। বিডিওর কারসাজিও দেখেছে।’

এরই মধ্যে বুধবার উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরালা, পুদুচেরি, আন্দামান ও নিকোবরের বিজেপি এবং সহযোগী দলগুলির সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘বিরোধীরা আপনাদের ফাঁদে ফেলতে চাইবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ওদের প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না।’ গত কয়েক বছরে বিজেপির কেন্দ্র এবং রাজ্যস্তরের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে।

Lalu Prasad Yadav : ‘বিদেশে পালিয়ে চাউমিন-পিৎজ্জায় ব্রেকফাস্ট-ডিনার!’ মোদীকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী লালুর
তাতে আখেরে দলের লাভ হয়নি বলেই মত বিজেপির। বিরোধীরা এক জোট হওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা নানা মন্তব্য করছেন। এই অবস্থায় প্রাদেশিক বা কোনও গোষ্ঠী সম্পর্কে নেতাদের বেফাঁস মন্তব্য দলকে বিপাকে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই জন্যই প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের সাবধান করলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version