এই সময়, আসানসোল: অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর গোরুপাচার মামলা আসানসোল থেকে দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ কোর্টে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। কিন্তু সেই মামলার শুনানিতে শনিবার আসানসোল সিবিআই আদালতে বড়সড় ধাক্কা খেল তারা। এমনকী সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর প্রশ্নবাণে ইডির আইনজীবীকে একসময়ে রীতিমতো অস্বস্তি বোধ করতে দেখা যায়।

আদালতের কাছে ফের শুনানির আবেদন জানান তিনি। আদালতে উপস্থিত কেষ্টর আইনজীবীদের মত জেনে আগামী ২ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারক। গত ২৮ জুলাই আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে অনুব্রতর গোরুপাচার সংক্রান্ত মামলা দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছিল ইডি।

Partha Chatterjee : বাড়িতে অবৈধ চাকরির অফিস পার্থর: সিবিআই
এদিন ছিল সেই আবেদনের প্রথম শুনানি। সেখানেই সিবিআই আদালতের বিচারকের পর পর প্রশ্নের মুখে পড়েন ইডির আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র। প্রথমেই বিচারক জানতে চান, ইডি এই মামলা দিল্লিতে সরিয়ে নিতে চাইছে কেন? কোন আইনে ইডি এই আবেদন জানাচ্ছে? এমনকী ইডিকে এই অধিকার কে দিয়েছে, বিচারক তাও জানতে চান।

ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বিচারক বলেন, ‘কোনও মামলা কি ইচ্ছে করলে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যে কোনও রাজ্যে নিয়ে যেতে পারে? সেক্ষেত্রে সেই মামলার সাক্ষীদের কী হবে?’ ২০২২-এর ১১ অগস্ট বোলপুরের বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তার পর থেকে সেই মামলার শুনানিতে সওয়াল-জবাবে অংশ নিচ্ছেন সিবিআই ও অনুব্রতর আইনজীবীরা।

Suvendu Adhikari News : ‘আমি নিজে সাফারার…’, NRC-CAA ইস্যুতে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শুভেন্দুর
সম্প্রতি এই মামলায় নিজেদের জড়িয়েছে ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লির তিহার জেল থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে অনুব্রত আসানসোলে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর কাছে আবেদনে জানিয়েছিলেন, তাঁর মামলা যেন দিল্লিতে না যায়। অনুব্রত সেই আবেদনে জানিয়েছিলেন, তিনি বাংলার বাসিন্দা। বীরভূমে তাঁর বাড়ি। এই মামলার সাক্ষীরাও সব সেখানকার।

ফলে বিচারক যেন বিষয়টি বিবেচনা করে দেখেন। এদিন শুনানির শুরুতেই ইডির আইনজীবীকে বিচারক বলেন, ‘ইডি কেন এগিয়ে এল? সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) করা হয়েছে কি?’ ইডির আইনজীবী আইনের একাধিক ধারা উল্লেখ করে জানান, প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা পিএমএলএ আইনে কোনও আর্থিক অনিয়মে ইডি ইন্টারভেন করতে পারে। এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং (আর্থিক তছরুপ) হয়েছে।

পালটা বিচারক জানতে চান, কোনও মামলা শিফট করানোর ক্ষমতা কি ইডির রয়েছে? ইডি কি অথরাইজড? যদি তাই হয় তাহলে কে অথরাইজ করেছে, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট কি? বিচারকের এই প্রশ্নে কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে আইনজীবী জানান, মামলা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে ইডি। বিচারক বলেন, ‘ধারাগুলি দেখান তো।’ সেগুলি দেখে বিচারক জানান, এই সব ধারায় সেই অধিকারের কথা বলা নেই।

Justice Abhijit Ganguly : প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে বড় নির্দেশ! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ ডিভিশন বেঞ্চের
ইডির আইনজীবীকে এর পর বিচারক প্রশ্ন করে বলেন, কোনও একটি মামলায় যদি দেখা যায় অভিযুক্তরা কেউ কেরালা, কর্ণাটক বা অসমের, তাহলে সেই মামলা কোথায় যাবে? তার সাক্ষীদেরই বা কী হবে? বিচারকের কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে না পেরে ইডির আইনজীবী তখন বলেন, ‘আমাকে আরও একটু সময় দেওয়া হোক। আমি তথ্য সমেত জানাব।’

এদিন অনুব্রতর হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী শেখর কুণ্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ। বিচারক তাঁদের সঙ্গে সময় চাওয়া নিয়ে কথা বলেন। দুই আইনজীবীই জানিয়ে দেন, ইডির আইনজীবীর সেই আবেদনে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। এর পর বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জানিয়ে দেন, এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ২ সেপ্টেম্বর।

পরে আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, ‘আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে মামলা দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। এদিন তার শুনানিতে ইডির আইনজীবী বিচারকের কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তিনি সময় চেয়েছেন। তাঁর সওয়াল শেষ হলে আমরা জবাব দেবো।’

Anubrata Mondal Daughter : ‘বাবা ভালো নেই’, অসুস্থতার খবর শুনে আদালতে চোখের জল অনুব্রত কন্যা সুকন্যার
শনিবার শুনানির সময়ে এজলাসে হাজির ছিলেন এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্য ও তাদের আইনজীবী রাকেশ কুমার। তাঁরা অবশ্য এদিনের শুনানিতে অংশ নেননি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version