এতক্ষণে যাঁদের চোখ কপালে উঠেছে, তাঁদের বলা যায় – বিষয়টা কাল্টিভেট করতে হচ্ছে! আমেরিকায় ওয়ালমার্ট, টার্গেট-সহ আরও মাল্টি ইউটিলিটি হাইপার মার্কেটগুলো সাধারণত বিরাট বড় জায়গা জুড়ে হয়। সব জিনিসই শেলভে সাজানো থাকে – তা বিয়ার হোক বা বার্গার ব্রেড, শ্যাম্পু হোক বা ডিও, চকোলেট হোক বা ফ্রুট জুস। বাস্কেট হাতে নিয়ে যে যাঁর প্রয়োজন মতো জিনিস তাতে রাখেন, কাউন্টারে গিয়ে পে করেন, বেরিয়ে যান। এর মধ্যে যে টুকটাক জিনিসপত্র তুলে নেওয়া ছিল না, এমন নয়। তবে তা কখনওই দোকানগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়নি। একই অভিজ্ঞতা ওষুধ-চেন সিভিএস ও ওয়ালগ্রিনস, হোম ইমপ্রুভমেন্ট ফার্ম হোম ডিপো ও জুতো বিক্রেতা ফুট লকার!
আমেরিকান মিডিয়ার দাবি, করোনার পর থেকে মানুষ যখন ‘নিউ নর্ম্যালে’ অভ্যস্ত হচ্ছেন, তখন থেকেই এই শপ লিফ্টিং একটু একটু করে বাড়ছিল। শুধু এই সব স্টোরেই নয়, ওষুধের দোকানগুলোতেও, যে সব জায়গায় ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ (ওটিসি) বাইরেই সাজানো থাকে। কারণ সেগুলোতে প্রেসক্রিপশন লাগে না। ২০২২ সালের আমেরিকার রিটেল সিকিউরিটির সার্ভে রিপোর্ট বলছে, মানুষ কেনাকাটা কমিয়েছেন গত ৩ বছরে। তার মধ্যে ২০২১ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ৯৪৫০ কোটি ডলার! এর বিরাট কারণ শপ লিফ্টিং ও অর্গানাইজ়ড শপ লিফ্টিং! ওই সমীক্ষাতেই দেখা গেছে ওই বছরেই ২৬.৫ শতাংশ বেড়েছে দোকান থেকে হাতসাফাই। যার ফল হাতেনাতে মিলেছে খুচরো ব্যবসার সে বছরের আর্থিক পারফর্ম্যান্সে।
টার্গেট চেনের সিইও ব্রায়ান কর্নেলের কথায়, ‘এই বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমাদের স্টোরগুলোতে এই চুরি বেড়েছে ১২০ শতাংশ! শুধু তাই-ই নয়, অনেক সময়েই শপ লিফ্টার্সরা ধরা পড়লে এতটাই হিংস্র হয়ে উঠছেন যে স্টোরের সাধারণ কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের প্রাণ সংশয় হচ্ছে।’ তিনি সাফ জানান, একটা সময় পর্যন্ত এই চুরি মানা যায়, কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে আর সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চূড়ান্ত ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে অনেক দিন ধরে।
ডিক’স স্পোর্টিং গুডসের সিইও লরেন হোবার্ট বলছেন, ‘এটা একটা মাত্রাছাড়া জায়গায় পৌঁছেছে। অর্গানাইজ়ড রিটেল ক্রাইম ও সাধারণ চুরির ফলে খুচরো ব্যবসায়ীদের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে।’ ওয়ালমার্টের মতো সুপার সেন্টারও ‘আর্থিক ক্ষতি’র কারণে শিকাগোতে বন্ধ করেছে চারটি আউটলেট! অফিশিয়ালি শপ লিফ্টিং-কে কারণ না বললেও, সেটাই যে আসল তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্টেই স্পষ্ট।
তবে তালা মেরে রাখলেই যে চুরি হবে না, সে কথাও আর হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কারণ জুন মাসে নিউ ইয়র্কের কুইনসের ‘ওয়ালগ্রিন’ স্টোরে হুডেড জ্যাকেট ও ফেস মাস্ক পরে এক ব্যক্তি ঢোকেন। তিনি ‘ব্লো-টর্চ’ দিয়ে কাচের শেলভের তালা গলিয়ে যা যা জিনিস নেওয়ার নিয়ে, কোনও পেমেন্ট না করেই চলে যান। স্টোরের কর্মী ও অন্য ক্রেতাদের সামনেই এটা হয়। আবার অন্য একটি স্টোরে ৩০ জনের দল ঢুকে পড়ে। শাসানি দিয়ে জিনিস তুলে নিয়ে চলে যায়! ওয়াশিংটনে এটা সবচেয়ে বেশি। ঝাঁপ ফেলার কথা তাই অনেক স্টোরই ভাবতে লেগেছে!
তবে ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা’ এখানে খাটছে না। কারণ শপলিফ্টার্সদের চিহ্নিত করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছেন না তাঁরা। যদি প্রাণে মেরে দেন বিক্রেতাদের!