অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়
মঙ্গলবার কাকদ্বীপের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ও শেসন জাজের ফার্স্ট কোর্ট তথা স্পেশ্যাল পকসো কোর্টের বিচারক যখন রায়দান করছেন, তখন হোমে থাকা এক নাবালিকা নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ডুবে। যার সম্পর্কে এ দিন রায় ঘোষণা করছেন অতিরিক্ত জেলা জজ সর্বাণী মল্লিক চট্টোপাধ্যায়, সে লোকটা সম্পর্কে ওই নাবালিকার বাবা। নিজের মেয়েকে লাগাতার ধর্ষণ করায় সে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (২এফ) (২এন) ও ৫০৬ এবং পকসোর ৬ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এ ছাড়াও ওই নাবালিকাকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

Calcutta High Court : ধর্ষণের শিকার নাবালিকাকে মা-বাবার পরিত্যাগ, গর্ভপাতে অনুমতি হাইকোর্টের
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার শুরু বছর আড়াই আগে। সুন্দরবনের ঢোলাহাট থানা অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে থাকতেন স্বামী, স্ত্রী ও তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে। একই বাড়িতে থাকতেন বাচ্চা দু’টির ঠাকুমাও। তবে ১১-র ওই কিশোরীর মা মানসিক ভাবে সু্স্থ নন। নিজের খেয়ালে থাকতেন। ফলে নিজের যৌন চাহিদা মেটাতে তাঁর স্বামী নিশানা করে নিজেরই মেয়েকে। সুযোগ পেলেই তাকে ধর্ষণ করত সে। আর মেয়েকে সব সময়েই শাসিয়ে রাখত, ‘যদি কোথাও মুখ খুলেছিস, তার পরিণতি তুই ভাবতেও পারছিস না।’ অনেক দিন সহ্য করার পরে সে প্রথমে মাকে বলে। কিন্তু মায়ের বোঝার ক্ষমতা ছিল না যে মেয়ে কী বলতে চাইছে। তার পরে সে যায় ঠাকুমার কাছে।

Dakshin 24 Pargana News : দরজা খুলে রেখে ঘুম! শিশুকে খুনের হুমকি দিয়ে মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে
তিনি ছেলের এই কীর্তির কথা শুনে নাতনিকেই পরামর্শ দেন ‘চুপ করে থাক!’ তবে বাবার বিকৃত যৌন খিদে মেটাতে মেটাতে সে তখন দিশাহারা। তখন সে সাহায্য চেয়ে পাশের বাড়ির এক কাকিমাকে বলে। তিনি প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে না পারলেও কিশোরীকে অবিশ্বাস করেননি। থানায় গিয়ে সেখানকার আইসি কৌশিক নাগকে পুরো বিষয়টা জানান। তিনি এক মুহূর্তও দেরি না করে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। গত বছরের ৯ জুন তা দায়ের করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই প্রদ্যুৎ ঘোষকে।

West Bengal Local News: স্ত্রীকে মারধর, অ্যাসিড! গ্রেফতারির পর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু অভিযুক্তর
সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয় নাবালিকার বাবাকে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণ নিশ্চিত করা হয়। সে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দিতেও (সিআরপিসি ১৬৪) তার বাবার যৌন নিগ্রহের কথা জানায়। এর পরে অভিযুক্তের জামাকাপড়, নাবালিকার পোশাক, তার ভ্যাজাইনাল সোয়াব ও ইউরেথ্রাল সোয়াব ফরেন্সিক টেস্টে পাঠানো হয়। সেখান থেকেও ধর্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়। মেয়েটি ও তার থেকে বছর চারেকের ছোট ভাইকে তাদের নিরাপত্তার জন্য একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তদন্ত চলতে থাকে। ইতিমধ্যে কোর্টের অনুমতি নিয়ে নির্যাতিতার মাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় কলকাতার একটি মানসিক চিকিৎসার হাসপাতালে।

Birbhum News : যজ্ঞের নাম করে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন, ফাঁসির নির্দেশ রামপুরহাট আদালতের
দু’মাসেরও কম সময়ে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেয় ঢোলাহাট থানা। ট্রায়াল শুরু হওয়ার পরে এই কেস খুব গুরুত্ব দিয়ে সুন্দরবন পুলিশ জেলার মনিটরিং সেল নজরদারি করে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘এ রকম একটা ঘৃণ্য মামলায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক চেয়েছিলাম, আমরা সফল।’ তবে তিনি নাবালিকা ও তার ভাইকে নিয়ে চিন্তায় আছেন। জানালেন, আপাতত ওরা ওই হোমেই রয়েছে, সেখানেই পড়াশোনা করে। মেয়েটির কাউন্সেলিংও হয়। কিন্তু ভবিষ্যতে ওদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মেয়ে জানে না বাবার শাস্তির কথা। শুনলে কি খুশি হবে নাকি দুঃখ পাবে? এই উত্তর পুলিশের কাছেও নেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version