তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছেন রুমানা খাতুন নামে ওই মহিলা অফিসার। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুটছেন পুরসভার অন্যান্য আধিকারিকেরাও। তাঁদের প্রশ্ন, অফিসাররা পুরবোর্ডের সদস্যদের কথায় চলেন। মেয়র কিংবা মেয়র পারিষদ সদস্যরা কোনও নির্দেশ দিলে পুর আধিকারিকরা সেটা মেনে চলতে বাধ্য। তাহলে পুরসভায় কোনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই কেন শুধু অফিসারদের দিকেই বন্দুক তাক করা হচ্ছে?
পুরসভা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রায় আট বছর আগে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় মোট ৬৩টি স্কুলে শৌচাগার তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি শৌচাগারের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ, অনেক স্কুলেই নিয়ম মেনে সেই টাকা খরচ করা হয়নি। যে সব শৌচাগার তৈরি হয়েছে, সেগুলি অত্যন্ত নিম্নমানের। সে জন্য এখন অভিযুক্ত করা হচ্ছে শিক্ষা বিভাগের তৎকালীন চিফ ম্যানেজার রুমানা খাতুনকে।
তাঁকে ইতিমধ্যেই অন্য বিভাগে বদলির পাশাপাশি ভিজিল্যান্স তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, শৌচাগার ঠিকমতো তৈরি হয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। এরপর ইনস্পেক্টরা তা খতিয়ে দেখেন। তার ভিত্তিতে তিনি ফাইলে সই করেছেন। তাছাড়া, যে সময় স্কুলে শৌচাগার তৈরি হয়েছিল তখন শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদ ছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ফাইলে তাঁরও সই রয়েছে।
এছাড়াও পুরসভার একজন আইএএস অফিসার সহ অন্তত পাঁচজন পুর অফিসার সই করেছেন। পুর আধিকারিকরা প্রশ্ন তুলছেন, শৌচাগার তৈরিতে কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে বাকিদের ছেড়ে কেন শুধুমাত্র এক নিচুতলার অফিসারের ঘাড়ে দায় চাপানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই অফিসাররা একসঙ্গে মেয়রের কাছে দরবার করবেন বলে জানিয়েছেন।
পুর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এর আগে ত্রিফলা কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। তৎকালীন মেয়রের নির্দেশে ত্রিফলা বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও বেনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে লাইটিং বিভাগের ডিজি গৌতম পট্টনায়েক সহ একাধিক ইঞ্জিনিয়ারকে শাস্তি পেতে হয়। কয়েক বছর আগে পুরসভার ওষুধ কেনা নিয়ে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ক্যাগের তদন্ত রিপোর্টে তা নিয়ে কড়া মন্তব্য করা হয়।
এরপরেই স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক অফিসারকে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু যাদের নির্দেশে অফিসাররা এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা শেষপর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গিয়েছেন। জেএনএনইউআর প্রকল্পে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে নিকাশি সংস্কার নিয়েও কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পুরসভার অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দুর্নীতির প্রমাণ মেলার পরে ঠিকাদারকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এদিন শৌচাগার দুর্নীতিতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি একটা মিটিং-এ আছি। কথা বলতে পারব না।’ মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘স্কুলে শৌচাগার তৈরিতে কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকলে দোষীরা শাস্তি পাবে। কেউ রেহাই পাবেন না।’