এই সময়: রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য বনাম রাজভবনের টানাপড়েন চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। রাজ্যের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিল আটকে রেখেছে রাজভবন। সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অচলাবস্থা চলছে। এবার এই উপাচার্য নিয়োগ বিল সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যপালের দপ্তরের হলফনামা চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ৪ অক্টোবরের মধ্যে এই হলফনামা দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৬ অক্টোবর। এরমধ্যে আবার আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নিযুক্ত যে পাঁচজন অন্তর্বর্তী উপাচার্য এর আগে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের আবার চিঠি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর।

Bikash Bhawan : কার হুমকিতে ইস্তফা? ভিসিদের থেকে জানতে চায় শিক্ষা দফতর
এর আগে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিল আটকে রাখা সংক্রান্ত মামলায় এদিন হাইকোর্টে মামলাকারীর আইনজীবী যুক্তি দেন, একটি বিল যাওয়ার পরে রাজ্যপাল তিনটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, তিনি বিলে সম্মতি জানিয়ে সই করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তিনি পরামর্শ দিয়ে বা না দিয়ে আবার বিবেচনার জন্য বিষয়টি ফেরত পাঠাতে পারেন। তৃতীয়ত, তিনি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল কোনওটিই করেননি। উপাচার্য নিয়োগ বিলে সই না করে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন না রাজ্যপাল।

CV Ananda Bose : সংঘাত-বৃত্তে শিক্ষামহলও, ভিডিয়ো-বার্তায় প্রাক্তন ভিসিদের নিশানা বোসের
পাল্টা কেন্দ্রের তরফে আইনজীবীর সওয়াল, সংবিধান রাজ্যপাল-সহ সাংবিধানিক পদে থাকা একাধিক ব্যক্তিকে রক্ষাকবচ দিয়েছে। তাঁরা জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। কেন্দ্রের তরফে কৌঁসুলি মামলাকারীর রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখারও আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য, মামলাকারী একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। এই পরিচয় গোপন করে তিনি মামলা করেছেন। তাই এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘যদি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়, তা হলেও কি আদালত রাজ্যপালকে কোনও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে না? ডানদিক-বাঁদিক অথবা মাঝখানে–যেদিকেই হোক, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আদালত রাজ্যপালকে বলতে পারে না?’

CV Ananda Bose : ‘ভ্যাম্পায়ার’-এর পালটা বোসের ‘বৌদ্ধিক সন্ত্রাস’, ‘ভয়’ দেখাল কে? নয়া চাপানউতোর
আদালতের আরও বক্তব্য, ‘এই ধরনের সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের কৈফিয়ত তলব করা যায় না, সময় বেঁধে দেওয়া যায় না, কিন্তু যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধও কি আদালত করতে পারে না?’ এবার হাইকোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্যপালের তরফ থেকে হলফনামায় কী জানানো হয়, সে দিকে নজর থাকছে শিক্ষা মহলের। গত বৃহস্পতিবার এক ভিডিয়ো বার্তায় বোস জানান, তাঁর নিযুক্ত পাঁচ উপাচার্য ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। একজন সিনিয়র আইএএস অফিসার তাঁদের চাপ দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে ইস্তফা দিতে বলেছেন। ভয় দেখিয়ে তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টিতে উৎসাহ দিয়েছিল উচ্চশিক্ষা দপ্তরও। রাজ্যপালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষা দপ্তর ওই উপাচার্যদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিল, কে বা কারা তাঁদের হুমকি দিয়েছিল।

CV Ananda Bose : ‘সংবিধানকে অশ্রদ্ধা করা হচ্ছে…মন্ত্রীরাও সামিল’, তোপ রাজ্যপালের
সোমবার ছিল উত্তর দেওয়ার শেষদিন। সংশ্লিষ্ট পাঁচ উপাচার্য অবশ্য রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্বে নিজেদের জড়াতে চান না বলে কোনও লিখিত উত্তর দেননি। এরপর এদিন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফে তাঁদের ফের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের তরফে কোনও উত্তর না আসায় আমরা এটা ধরে নিলাম, রাজ্যপাল তথা আচার্য যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সত্যতা নেই বলেই আপনারা কোনও উত্তর আমাদের পাঠালেন না।’ এই চিঠির প্রেক্ষিতে রাজ্য-রাজভবন সংঘাত কোনও নতুন মোড় নেয় কি না, সেটাও দেখার।

CV Ananda Bose : মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে ‘ডোন্ট কেয়ার’! ফের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ রাজ্যপাল বোসের
এ ব্যাপারে জানতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্যাকাউট) পদত্যাগী উপাচার্য ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাফ জবাব, ‘আমি ইস্তফা দিইনি। আমাকে রাজভবন রিপ্লেস করেছিল। আমার ক্ষেত্রে এ নিয়ে কোনও অস্পষ্টতা নেই।’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় সরকারি তরফে দু’টি চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এই টানাপড়েনে আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version