এর আগে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিল আটকে রাখা সংক্রান্ত মামলায় এদিন হাইকোর্টে মামলাকারীর আইনজীবী যুক্তি দেন, একটি বিল যাওয়ার পরে রাজ্যপাল তিনটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, তিনি বিলে সম্মতি জানিয়ে সই করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তিনি পরামর্শ দিয়ে বা না দিয়ে আবার বিবেচনার জন্য বিষয়টি ফেরত পাঠাতে পারেন। তৃতীয়ত, তিনি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল কোনওটিই করেননি। উপাচার্য নিয়োগ বিলে সই না করে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন না রাজ্যপাল।
পাল্টা কেন্দ্রের তরফে আইনজীবীর সওয়াল, সংবিধান রাজ্যপাল-সহ সাংবিধানিক পদে থাকা একাধিক ব্যক্তিকে রক্ষাকবচ দিয়েছে। তাঁরা জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। কেন্দ্রের তরফে কৌঁসুলি মামলাকারীর রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখারও আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য, মামলাকারী একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। এই পরিচয় গোপন করে তিনি মামলা করেছেন। তাই এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘যদি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়, তা হলেও কি আদালত রাজ্যপালকে কোনও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে না? ডানদিক-বাঁদিক অথবা মাঝখানে–যেদিকেই হোক, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আদালত রাজ্যপালকে বলতে পারে না?’
আদালতের আরও বক্তব্য, ‘এই ধরনের সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের কৈফিয়ত তলব করা যায় না, সময় বেঁধে দেওয়া যায় না, কিন্তু যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধও কি আদালত করতে পারে না?’ এবার হাইকোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্যপালের তরফ থেকে হলফনামায় কী জানানো হয়, সে দিকে নজর থাকছে শিক্ষা মহলের। গত বৃহস্পতিবার এক ভিডিয়ো বার্তায় বোস জানান, তাঁর নিযুক্ত পাঁচ উপাচার্য ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। একজন সিনিয়র আইএএস অফিসার তাঁদের চাপ দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে ইস্তফা দিতে বলেছেন। ভয় দেখিয়ে তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টিতে উৎসাহ দিয়েছিল উচ্চশিক্ষা দপ্তরও। রাজ্যপালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষা দপ্তর ওই উপাচার্যদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিল, কে বা কারা তাঁদের হুমকি দিয়েছিল।
সোমবার ছিল উত্তর দেওয়ার শেষদিন। সংশ্লিষ্ট পাঁচ উপাচার্য অবশ্য রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্বে নিজেদের জড়াতে চান না বলে কোনও লিখিত উত্তর দেননি। এরপর এদিন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফে তাঁদের ফের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের তরফে কোনও উত্তর না আসায় আমরা এটা ধরে নিলাম, রাজ্যপাল তথা আচার্য যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সত্যতা নেই বলেই আপনারা কোনও উত্তর আমাদের পাঠালেন না।’ এই চিঠির প্রেক্ষিতে রাজ্য-রাজভবন সংঘাত কোনও নতুন মোড় নেয় কি না, সেটাও দেখার।
এ ব্যাপারে জানতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্যাকাউট) পদত্যাগী উপাচার্য ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাফ জবাব, ‘আমি ইস্তফা দিইনি। আমাকে রাজভবন রিপ্লেস করেছিল। আমার ক্ষেত্রে এ নিয়ে কোনও অস্পষ্টতা নেই।’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় সরকারি তরফে দু’টি চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এই টানাপড়েনে আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।’