ভাদুর ইতিহাস
বর্তমান পুরুলিয়া জেলার কাশীপুরের রাজা নীলমণি সিংহদেও এর আদরের মেয়ে ভাদু ওরফে ভদ্রাবতী। মেয়ে বিবাহযোগ্যা হলে এক রাজপুত্রের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন রাজা নীলমনি সিংহদেও। বিয়ে করতে আসার পথে ডাকাত দলের হাতে প্রাণ হারান বরবেশী রাজপুত্র! আর সেই খবর কাশীপুর রাজবাড়িতে পৌঁছালে আনন্দোৎসব বিষাদে পরিণত হয়। আর হবু বরের অকাল মৃত্যু শোক সহ্য করতে না পেরে রাজা, রাজপরিবার আর রাজ্যবাসী সকলের প্রিয় ভাদু আত্মঘাতী হন। পরে অকাল প্রয়াত মেয়ের স্মৃতিকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতেই বাবা নীলমণি সিংদেওর ভাদু পুজোর সূচনা করেন। এই পুজোর কোনও মন্ত্র নেই। বিশেষ এক সুরে গানের মাধ্যমেই ঘরের মেয়ের আরাধণায় মাতেন বাঁকুড়া-পুরুলিয়া সহ রাঢ় বঙ্গের মায়েরা।
ভাদু শিল্পীদের কথা
মূলত মুখশ্রী ও অঙ্গ সজ্জার জন্য সিমলাপালের লক্ষীসাগর গ্রামের মৃৎশিল্পীদের তৈরি ভাদুর ব্যাপক কদর ছিল। বর্তমানে সেই ঐতিহ্য বজায় থাকলেও চাহিদা কমেছে। ওই গ্রামেরই প্রবীণ মৃৎ শিল্পী মিহির চন্দ বলেন, ‘একটা সময় তিনি তিন হাজার ভাদু প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন সেই সংখ্যাটা নেমে এসেছে একশোতে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আগামী দিনে এই ভাদু পুজোও ইতিহাস হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করছেন বলে জানান।
শিল্পীরা কী বলছেন?
ওই গ্রামেরই শিল্পী জগন্নাথ চন্দ বলেন, ভাদুর চাহিদা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। দাদু, বাবা, কাকা-জ্যাঠাদের পর আমরা এই মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছি। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী প্রজন্ম এই কাজে আগ্রহ দেখাবেনা বলেই তিনি মনে করছেন বলে জানান। গানে গানেই ভাদু বন্দনা, কিন্তু শিল্পীকেও শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি এই সময়কার ভাদু পুজোতে অংশগ্রহণকারী মহিলারা। তাই তাঁরা ভাদু কেনার ফাঁকে সমবেতভাবে গান ধরেন, ‘তোমায় কে গড়েছে গো মিহির চন্দ মিস্তিরী, বড় ভালো গড়েছে যে…’।
নব প্রজন্ম বিমুখ?
স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট শিক্ষক সুদিন মণ্ডলও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা এখন পড়াশুনায় জোর দিয়েছে। প্রতিযোগীতার ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে গিয়ে এই সব পুজো পার্বণ নিয়ে তারা খুব কমই মাথা ঘামাচ্ছে বলে তিনি জানান।