জয় সাহা

কবীর সুমনের গানে ছিল দুটি লাইন, ‘প্রোমোটার শোনে টাকার বদলে বর্ষার গান, রবীন্দ্রনাথ বৃথাই ভেজেন, বৃথাই ভেজান।’ ওই গান লেখার আগে সুমন বর্ষায় যে মাঠে ভরা সবুজ দেখেছিলেন, সে মাঠেই আবার এই বর্ষায় উঠছে ‘বাড়ি গম্বুজ’, সে কথাও গানেই লেখেন তিনি। খানিকটা তেমনই অবস্থা উত্তর কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিট অঞ্চলের একটি পুজো কমিটির। গত বছর পর্যন্তও যে জায়গা আলো করে থাকতেন দেবী দুর্গা, আজ সেখানেই স্থানের বড়ই অভাব। কারণ প্রোমোটিং।

কমে এসেছে শতবর্ষ পার করা দুর্গাপুজোর পরিধি। এ নিয়ে বিবাদ যে একেবারে হয়নি তা নয়। কিন্তু পুজো কমিটি ঠিক করেছে, ঝগড়াঝাঁটিতে তারা যাবে না, বরং একেবারে বাস্তব ও জ্বলন্ত এই সমস্যাকেই পুজোর থিম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। থিমের বার্তা, প্রোমোটিং দরকার, কিন্তু পুজো, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও প্রয়োজন। উমার ঘরে ফেরার জায়গা এই কংক্রিটের শহরে থাকবে তো?

Durga Pujo 2023 : পুজোয় বিদ্যুতের রেকর্ড চাহিদা মিটাতে কোমর বেঁধে তৈরি রাজ্য
উত্তর কলকাতার গলিময় পথে ১১৪ তম বর্ষে পা রেখেছে বৃন্দাবন মল্লিক ফার্স্ট লেনের বৃন্দাবন মাতৃ মন্দিরের পুজো। রাস্তার উপরেই প্যান্ডেল হয়, পাশে একটি গ্যারাজের অংশ ব্যবহার করেও বহুদিন এখানে পুজো হতো। গতবারও হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই গ্যারাজ ভেঙেই উঠছে আবাসন। ফলে জায়গা গিয়েছে কমে। পুজো কমিটির দাবি, গত বছরও যেখানে ২৭০০ স্কোয়ার ফুট জায়গা নিয়ে পুজো করা গিয়েছিল, প্রোমোটিংয়ের চাপে এ বার তা কমে হয়েছে ১১০০ স্কোয়ার ফুটের মতো।

পুজো কমিটির তরফে শিবেন্দু মিত্রর বক্তব্য, ‘শহরের প্রয়োজনেই হয়তো প্রোমোটিংয়ের প্রয়োজন। সেটাকে আমরা ঠেকাবো কীভাবে। কিন্তু আবার পুজো, সংস্কৃতির কথাও তো মাথায় রাখতে হবে। এ ভাবে কত পুজো হারিয়ে গিয়েছে। কত পুজোকে এই সমস্যা পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। কিছু বছর পর হয়তো ওই ১১০০ স্কোয়ার ফুট জায়গাটুকুও মিলবে না।’ থিমশিল্পী ইন্দ্রজিৎ রায়ের ভাবনায় রয়েছে, বালি-সিমেন্টের বস্তা দিয়ে প্যান্ডেল সাজানো।

Durga Puja 2023 : বঙ্গের দুর্গাপুজোয় অনুদান ঢালতে চায় পদ্ম-শিবিরও, কটাক্ষ তৃণমূলের
এছাড়া টিএমটি বার ব্যবহার করেও নানা ইনস্টেলশন থাকবে। পুজোর জায়গায় যে বাড়িটি উঠছে, দর্শকরা তাকেও থিমের মধ্যে দেখতে পাবেন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, অন্য কোনও থিম ভাবা হবে। সেই মতো খানিকটা দূর পর্যন্ত কাজও এগিয়ে যায়। কিন্তু তারপর যখন প্রোমোটিংয়ের এই সমস্যা মাথা তুলে দাঁড়ায়, তখন পুজো কমিটির সদস্যরা মনে করলেন এটাকেই থিম করা দরকার।

শিবেন্দুর কথায়, ‘এটার মতো জ্বলন্ত কোনও সমস্যা আমরা অনুভব করতে পারিনি। কেবল নিজেদের কথাই নয়, জনমানসে বার্তা দিক আমাদের থিম। আমরাও সেটাই চাই।’ যদিও এই গ্যারাজ নিয়ে পুজো কমিটির সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরেই প্রোমোটিং সংস্থা কথাবার্তা চালাচ্ছে। কয়েক বছর আগে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পুজোর শর্ত মানার জন্য একটি চুক্তি করে দু’পক্ষ। কিন্তু দু’পক্ষেরই অভিযোগ, কেউই চুক্তিমতো কাজ করছে না।

Kolkata Police Durga Puja: মণ্ডপে ঢোকার আগেই পুলিশ জানাবে লাইন কত বড়! দুর্গাপুজোয় নয়া চমক
যে প্রোমোটিং সংস্থা কাজ করছে, তাদের তরফে দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা কখনওই চাই না পুজোর জৌলুস বন্ধ হোক বা পুজোর ক্ষতি হোক। কলকাতা হাইকোর্টের রায় রয়েছে যে পুজো করলেও চার ফুট রাস্তা ছাড়তে হবে। আমরাও এই অঞ্চলের বাসিন্দা। ফলে পুজো যাতে ঠিক ভাবে হতে পারে সেই প্রচেষ্টা আমরা করেছি।’ দেবব্রতর দাবি, চুক্তিমাফিক যা যা কমিটমেন্ট তাঁদের ছিল তা যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু পুজো কমিটির নিত্য-নতুন দাবি মানা সম্ভব নয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version