সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
গ্রামে ওঁদের মোটর বাইক দেখলেই খুদের দল ভূতের রাজা যাচ্ছে বলে হাততালি দিচ্ছে। সত্যজিৎ রায়ের গুপি গায়েন, বাঘা বায়েন সিনেমায় ভূতের বরে যা খুশি খেতে চাইলেই নিমেষে তা চলে আসত গুপি, বাঘার সামনে। যা একদিন ছিল সেলুলয়েডে, দিনবদলের পালায় এই দুনিয়ায় তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে জ়োম্যাটোর মতো খাবার সরবরাহকারী সংস্থার সৌজন্যে। ঝা চকচকে শহরে যা চোখ সওয়া তা এখন মিলছে একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ে। এখন হুট বলতেই যে পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে গাছ-গাছালির ছাওয়া সুনিবিড় গ্রাম বাংলাতেও। খাল-বিল, কাদা ভরা রাস্তা পেরিয়ে মোটর বাইক আরোহীরা নিয়ে আনছেন অর্ডারি বিরিয়ানি, চিকেন বাটার মশালা, বাটার নান। আর সেই মোটর বাইক চালকদের দেখেই আনন্দে হাততালি দিচ্ছে খুদের দল।

Trending News : কাঁকড়া খেতে গিয়ে গুনতে হল ৬৮০ মার্কিন ডলার! মাথায় হাত জাপানি পর্যটকের
কোথায় সেই গ্রাম? দেখা যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার মধুপুর, কাশীপুর, ধাত্রীগ্রাম, বাঘনাপাড়া, আড়বেলিয়া, পিন্ডিরা থেকে লাগোয়া জেলা হুগলির বেহুলার মতো গ্রামেও পৌঁছে যাচ্ছেন ডেলিভারি বয়রা। গত কয়েক বছরে কালনা শহরে রেস্তরাঁ ব্যবসায় চোখে পড়ার মতো বদল এসেছে। বড় রেস্তরাঁর পাশাপাশি তৈরি হয়েছে বিরিয়ানি, ফাস্ট ফুডের দোকান। তাদের সঙ্গে টাই-আপ করে কালনায় ব্যবসা শুরু করেছে জ়োম্যাটোর মতো সংস্থা। আর তাদের ব্যবসা ছড়িয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতেও। সংস্থার ডেলিভারি বয় বিক্রম দে বলেন, ‘এটা তো কলকাতার মতো শহর নয়, গ্রাম। ফলে একটা চ্যালেঞ্জ কাজ করে আমাদের মধ্যে।’ কেমন সেই চ্যালেঞ্জ? বলেন, ‘বহু দুরের গ্রাম থেকে অর্ডার আসার সময় দেখা গেল বাইরে বৃষ্টি পড়ছে।

Biryani Restaurants Near Me : বিরিয়ানির একাধিক নাম দোকানে হানা! খাবারের মান নিয়ে কী বলল প্রশাসন?
এলাকায় পৌঁছতে গিয়ে দেখা গেল রাস্তায় আলো নেই, জল-কাদায় ভর্তি পথ। কিন্তু সময়ে খাবার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।’ আর এক ডেলিভারি বয় কৌশিক দেবনাথ জানাচ্ছেন, তাঁদের ব্যাগে এমন সিস্টেম রয়েছে যাতে খাবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা গরম থাকে। বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার পৌঁছে দেন তাঁরা। ফলে খুব দূরে গেলেও খাবার গরম থাকে। তবে বেশিরভাগ অর্ডার আসে ফোনে। ডেলিভারি বয় দেবাশিস কীর্তনীয়া বলেন, ‘গ্রামে গেলে অনেকেই আমাদের কাছে এসে ফোন নম্বর চেয়ে নেন।

Food Court In Kolkata : শহরে ফুড চেন হাব গড়বে রাজ্য?
তাঁরা অ্যাপে তত স্বচ্ছন্দ নন। তাঁরা ফোনে অর্ডার দিতেই পছন্দ করেন।’ সংস্থার এই এলাকার চিফ অপারেশনাল ম্যানেজার বিক্রম সাঁতরা জানাচ্ছেন, দূরবর্তী গ্রাম থেকেও এখন ভালো অর্ডার পাচ্ছেন তাঁরা। বলেন, ‘এখন আমাদের টার্গেট একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ে পৌঁছে যাওয়া কারণ, এতদিন কোনও সম্পন্ন চাষি পরিবারের ইচ্ছা থাকলেও রকমারি খাবারের নাগাল পেতেন না তাঁরা।’

কালনা শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকার একটি নামী রেস্তরাঁর ম্যানেজার সৌমেন রায় জানাচ্ছেন, বিরিয়ানি, তন্দুরি, রুমালি রুটি, বাটার নান, চিকেন পকোড়া, বাটার চিকেনের মতো খাবারের অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খাবারের অর্ডার আসায় ব্যবসাও বেড়েছে। নিয়মিত কাস্টমার বাঘনাপাড়ার পুষ্কর গোস্বামী, উপহার রায় বলেন, ‘আমাদের পক্ষে কালনা শহরে যাওয়াটাই ঝক্কির।

জি২০ সামিটে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের পাতে পড়েছিল মুঘলাই খানার ভারতীয় সংস্করণ ‘পনির লাবাবদার’
যেতে-আসতেই বেশ কিছুটা সময় লেগে যাবে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও ওই সব খাবারের সুযোগ পেতাম না। এখন বাড়িতে বসেই পছন্দের রেস্তরাঁর গরম খাবার পেয়ে যাচ্ছি।’ রানিবন্ধের সম্পন্ন চাষি সুমন মণ্ডল, ধাত্রীগ্রামের ব্যবসায়ী সঞ্জয় বসাক জানাচ্ছেন, দামি রেস্তরাঁর বিরিয়ানি যে এভাবে বাড়িতে বসে খাওয়া যায় তা আগে তাঁরা ভাবতেই পারতেন না। এখন পারছেন। তাঁরা যে এখন ‘ভূতের বর’ পেয়েছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version