বিশ্বসেরা স্বীকৃতি
খবরটা বেশ খানিকটা অপ্রত্যাশিত’ই ছিল ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপনারায়ণ নায়েকের কাছে। নিজে জানতেনও না। মেইল এসে পড়ে আছে ইনবক্সে। দেখেনও নি তেমন অভ্যেস না থাকায়। সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হতেই শুভেচ্ছার বন্যা। জামুড়িয়ার তিলকা মুর্মু আদিবাসী বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক। আন্তজার্তিক গ্লোবাল টিচার পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের আরও এক শিক্ষক রয়েছেন এই তালিকায়। ইউনেস্কো এবং ইউএই-র একটি সংগঠন যৌথ ভাবে এই পুরস্কার দেয়।
কোভিড কালে পরিচিতি
কোভিড কাল থেকেই চর্চায় আসেন ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপ নারায়ণ নায়ক। বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে তিনি রাস্তায় স্কুল তৈরি করেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে শুরু করেন রাস্তার উপরে। মাটির ঘরে দেওয়াল হয়ে ওঠে ব্ল্যাকবোর্ড এবং রাস্তাতেই চটের বস্তা পেড়ে আকর্ষণীয় ছন্দে তিনি পঠন-পাঠন করাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে শুরুবকরে। শুধু নিজের বিদ্যালয় তিলকা মুর্মু প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় তিনি তার পাশাপাশি বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে এরকম করে ছোট ছোট স্কুল তৈরি করেন। আসানসোলের নামো জামডোবা, পাণ্ডবেশ্বর, পুরুলিয়ায় তার এই রাস্তায় স্কুল চলছে।
পড়াশোনা ছাড়াও অনেক কিছু
তবে শুধু স্কুল নয়, ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠন করানোর পাশাপাশি তাদের দুধসহ পুষ্টিকর খাবার বিতরণ, পোশাক বিতরণ এবং পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত সচেতনতা গ্রামের মানুষদের সচেতন করার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। তাঁর খবর বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হতেই প্রচুর মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই মুহূর্তে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি স্কুল চালাচ্ছেন দীপ নারায়ণ। সুন্দরবন সহ বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল দীপ নারায়ণের এই দূরদর্শিতায় স্কুলগুলি চালিয়ে আসছে বিভিন্ন মানুষজন।
পড়ুয়াদের সঙ্গে দীপ নারায়ণ নায়েক
মিলল সেরা শিক্ষকতার পুরস্কার
বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন দীপ নারায়ণ নায়ক। কিন্তু বিশ্ব সেরা পুরস্কারের খবরে খানিকটা হলেও চমকিত তিনি নিজেই। জানালেন এর আগে অস্ট্রিয়াতে একবার তাঁর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। অস্ট্রিয়া পার্লামেন্টে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। সেই সময় তার কাছে কোন পাসপোর্ট ছিল না। তাই পরবর্তীকালে পাসপোর্ট তিনি তৈরি করেছেন এবং এবারের আমন্ত্রণ তিনি পেলে অবশ্যই তিনি যেতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন।
কী জানালেন শিক্ষক?
দীপ নারায়ণ বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পেয়ে আমি মেইল চেক করি এবং দেখি যে একটি মেইল এসেছে ওনাদের পক্ষ থেকে এবং আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু এর পরবর্তীকালে কী ভাবে আমি যাব বা যাওয়ার পদ্ধতি কী? সেসব বিষয় আমি এখনো পর্যন্ত জানিনা।’ তাঁর কথায়, আমি অপেক্ষা করছি ওঁদের যোগাযোগের জন্য। কারণ আমার তরফ থেকে যোগাযোগ করার কোনও উপায় নেই। তিনি জানান, সম্প্রতি ‘দাদাগিরি’র মঞ্চেও তাঁকে দেখা যাবে। দীপ নারায়ণের কথায়, এই সমস্ত পুরস্কার আরও দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। আরো বহু মানুষও কাজের সঙ্গে জুড়ে যান। তাই অবশ্যই এই পুরস্কার একটি সদর্থক দিক আছে। আমি আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করব।
সব খবর আগে পেতে এই সময় ডিজিটাল হোয়াটস্যাপ চ্যানেল। ক্লিক: https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A