দুর্গাপুজো, ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার পালা। যেমন মা দুর্গা এই সময় আসেন তাঁর বাপের বাড়ি, ঠিক তেমনই মেয়ের পথ চেয়ে থাকেন আর পাঁচজন বাবা-মাও। কারণ, এই তো ক’টা দিন, মেয়েকে প্রাণভরে আদরযত্ন করতে কে না চান! কিন্ত ঘরে ফেরা হল না তাঁর। হাসপাতালের বিছানা থেকেই, নিলেন চিরবিদায়। ডেঙ্গির মারণ থাবায় ঘটল এক জলজ্যান্ত তরুণীর জীবনের ‘সমাপ্তি’।

এখনও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না!
নাম সমাপ্তি মালিক, বাড়ি দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায়। ছিলেন কলেজ ছাত্রী। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে, প্রথমে সরকারি হাসপাতাল, পরে নার্সিংহোম, তারপর আবার সেই সরকারি হাসপাতালেই মৃত্যু হল তাঁর। ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না যে সমাপ্তি আর নেই। বিশ্বাস করবেনই বা কী করে, কারণ প্রতিটা দিন, প্রতিটা ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড যেন জানান দিচ্ছে, তাঁদের মেয়ে ঘরেই আছেন।

সাজগোজ ছিল খুব প্রিয়
সাজগোজ করতে খুব ভালোবাসতেন সমাপ্তি। পুজো নিয়ে অনেক প্ল্যানও ছিল তাঁর। চলছিল জমিয়ে শপিং। বিভিন্ন শপিং সাইটে অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিলেন বেশকিছু জিনিস। কিন্তু নতুন জামা আর গায়ে উঠল না। তার পরিবর্তে সাদা কাপড়ে মোড়া দেহটা পুড়ে ছাই হল চুল্লির গনগনে আঁচে। কিন্তু অর্ডার ডেলিভারি থেমে নেই। পছন্দ করে অর্ডার দেওয়া জামা-জুতো, সবই আসছে এপর পর এক। আর সেই সব পার্সেল হাতে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছেন সমাপ্তির পরিজনেরা।

সকলের ছোট ছিলেন সমাপ্তি
সমাপ্তিরা তিন বোন। তিনিই ছিলেন সবচেয়ে ছোট। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে তিনিই চলে গেলেন সবার আগে। মেজ বোন রত্না মালিক নার্সিং পড়েন, থাকেন বেঙ্গালুরুতে। বোন গুরুতর অসুস্থ, এই কথা বলে তড়িঘড়ি বিমানে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। কিন্তু এসে দেখলেন সব শেষ। আদরের ছোট বোন তখন তখন চিরঘুমে শায়িত। বোনের সঙ্গে আর কথা বলা হল না তাঁর। বোনকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ তিনি।

Bonedi Bari Durga Puja : শতবর্ষে হাওড়ার বসু মল্লিক পরিবারের পুজো, স্পেশাল কী কী থাকছে?
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মিষ্টি স্বভাবের প্রাণোচ্ছল মেয়ে ছিলেন সমাপ্তি। আত্মীয়স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশী, সকলের সঙ্গেই মিশতেন ভীষণ সহজ-সরলভাবে। তাই এমন হাসিখুশি একটি মেয়ের এহেন পরিণতি যেন ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদেরও। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রত্যেকেই। এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তেমন নেই বলে দাবি সমাপ্তির এক দিদি ঝুনু বল্লভের। চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁর একটাই প্রশ্ন, অনেকেরই ডেঙ্গি হয়, সবাই তো বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর বোন কেন ফিরলেন না? সত্যিই সেই প্রশ্নের উত্তর হয়ত সকলেরই অজানা।

শারদ আমেজে মেতে বাংলা, দুর্গাপুজোর খবর-ছবি-ভিডিয়োর জন্য ক্লিক করুন এখানে



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version