দেবীপক্ষের চতুর্থ দিন অর্থাৎ চতুর্থীতেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে জনতার ঢল। শুধু শহরেই নয়, মফস্বলেও মণ্ডপে উৎসব মুখর মানুষের ভিড়। শুধু কলকাতা নয়, কলকাতা শহরতলিতেও একের পর এক চোখ ধাঁধানো পুজো প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। এমনই দারুণ সব দুর্গা পুজো মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ২৪ পরগনার সোদপুরেও।

সোদপুরের বার্মাসেল

সোদপুরের বার্মাসেলের এ বছর ৭৫ তম বর্ষে ফুটে উঠেছে প্যারিসের অপেরা হাউস। গত ৬ মাস ধরে প্রায় ২০০ জনের দল অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে প্যারিস ও মাটি দিয়ে পাশাপাশি প্লাইবোর্ড এর ওপর সোলার অসামান্য কাজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গোটা প্যান্ডেল। ইতিমধ্যেই এই প্যান্ডেল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ। সোনালী রঙের আলো ঝলমলে প্যান্ডেলের কারুকার্য রীতিমতো আকর্ষণ করছে দর্শনার্থীদের। মন্ডপে ভেতরে প্রবেশ করলেও চোখ ধাঁধানো কারুকার্য দেখে মনে হবে আপনি যেন দাঁড়িয়ে আছেন প্যারিসের অপেরা হাউসেই। মন্ডপের প্রতিমাও গড়ে তোলা হয়েছে প্যারিসের অপেরা হাউজের থিম এর মানানসই করে।

মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের মামার বাড়ির পুজো বলে বিখ্যাত

এলাকায় এই পুজো রাজ্যের মন্ত্রী তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের মামাবাড়ির পুজো বলেও অনেকে জানেন। ছোটবেলা থেকে এখানেই পূজো দিনগুলি কাটাতেন পার্থ ভৌমিক বলেই জানা গিয়েছে।এবার এই পুজোয় নৈহাটি থেকে তাই ছুটে এসেছে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।এবারের পুজো কলকাতার বড় পুজোগুলিকে টেক্কা দেবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। প্রতি বছরই ছোট হলেও নানা রকমের চমক লক্ষ্য করা যায় এই পুজোয়। এবছর ৭৫ তম বর্ষ হওয়ায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলা হয় এই প্যান্ডেল। আর তাই অপেরা হাউজের মধ্যে দিয়ে যেন বাড়তি ভিড় টানতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত জেলার অন্যতম সেরা এই পুজো।

দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় সামলাতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তা থেকে স্থানীয় প্রশাসন। প্রয়োজনে যান নিয়ন্ত্রণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে জানা যায় গোটা প্যান্ডেলটি প্রায় দু কোটি টাকার উপর খরচ করে তৈরি করা হয়েছে। এবছর এই পুজোর লাইটিংও মানুষকে আকর্ষিত করছে। দূর থেকেই নানা রকমের আলোকসজ্জা পরিলক্ষিত হবে প্যান্ডেলে প্রবেশের আগেই। সাথে মাথার ওপর নানা ধরনের ব্রিটিশ কালচারের চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে, একেবারে অপেরা হাউজের বিদেশি কালচারের মিউজিক। মনে হবে যেন বিদেশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন আপনিও। তাই এবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সেরা সেরা পুজো গুলির মধ্যে এই সোদপুরের বার্মাসালের অপেরা হাউস জায়গা করে নিয়েছে তা বলাই যায়।

সোদপুর উদয়ন সংঘ

সোদপুর উদয়ন সংঘের থিম এ বছর জল বায়ু ও আগুন। প্রকৃতিক নিয়েই , প্রকৃতিকে বাঁচাতেই এই পূজোর বিষয়বস্তু অন্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতিকে বাঁচাতে গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান এ ধরনের নানা সচেতনতা মূলক প্রচার আমরা লক্ষ্য করে থাকি। তবে তাতে তেমন ভাবে কাজ হয় না বললেই চলে। মাটির তলা থেকে জল বের করে নেওয়ার ফলে ক্ষতি হচ্ছে গাছের। জলস্তর নেমে গিয়ে ভূমিকম্পের পরিমাণ বেড়ে চলেছে পৃথিবীর বুকে। প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দূষিত হচ্ছে বসবাসযোগ্য এই পৃথিবী। আর তাই শিল্পীর শিল্প চেতনার মধ্যে দিয়ে এক অভি নব ভাবনাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন এই পুজো মন্ডপের বিষয়বস্তু হিসেবে। তাই ফেলে দেওয়া জিনিস লোহা ধাতব টুকরো টিনের টুকরো কাচের শিশিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা কারুকার্যের মধ্যে দিয়ে। এই প্যান্ডেল দেখলে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। যদিও মূল কাঠামো লোহার বলেই জানান শিল্পী।

এবার সোদপুর উদয়ন সংঘের এই পুজো ৫২ তম বর্ষে পদার্পণ করল। প্রতিমা নির্মাণে ছিলেন সোনা রুপোর হীরের দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার। এটি তার প্রথম মাটির তৈরি প্রতিমা যদিও। যদিও প্রতিমাকে দেখলে মনে হবে যেন প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি। প্রতিমাতেও সাবেকী আনার পাশাপাশি থিমের সঙ্গে মানানসই রূপ দেওয়া হয়েছে। গোটা থিমটির নাম দেওয়া হয়েছে অশনি সংকেত। করোনা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে জলের অপচয় বন্ধ থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্য সবটাই নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন রয়েছে। মন্ডপে এক অবাক দৃশ্য দেখতে পারবেন দর্শনার্থীরা। সাধারণত আমরা জানি আগুনের সংস্পর্শে জল আসলেই আগুন নিভে যায়। কিন্তু অবাক কাণ্ড এই পুজো মন্ডপে। আগুন এবং জল পরস্পর মিশে থাকলেও আগুন নিচ্ছে না আর তা দেখতেই বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে এই উদয়ন সংঘের পূজোয়। ইতিমধ্যেই এই প্যান্ডেলে বিকেলের পর থেকেই বাড়ছে মানুষের ভিড়। পুজো শুরুর আগেই এই ভিড় পুজো উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহ যোগাচ্ছে বলেই জানালেন তারা।

ঘোষপাড়া তারাপুকুর আদি সার্বজনীন দুর্গোৎসবের বেনারস ঘাট

জেলাবাসীদের জন্য সুখবর, হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় থাকলেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন বেনারস। মন্দিরের পাশাপাশি বেনারস ঘাটের ফিল যেমন পাবেন তেমনই পাবেন দুর্গাপুজোয় চুটিয়ে আনন্দ করার সুযোগও। এবারের পুজোয় উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার ঘোষপাড়া তারাপুকুর আদি সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি তাদের পুজোর ভাবনায় ফুটিয়ে তুলছে বেনারস ঘাট। মন্দির সঙ্গে সেই বেনারসের চেনা পরিচিত আরতির ঘাট, যদিও গঙ্গার বদলে এখানে থাকছে পুকুর। তবু যেন একেবারে বেনারস এর সেই ঘাটের অনুভূতি মিলবে এই পুজো মন্ডপে আসলে, বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। আর এই বেনারসের ঘাটের আদলেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা পুজো মণ্ডপ, তবে ৮৪ বছরে তারাপুকুর আদি সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এইবারের ভাবনা “বর্ণময় বেনারস”।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version