এই সময়, বর্ধমান: ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার পরে রায়নার আনগুনা গ্রামের একদল যুবকের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল হাতে লেখা শারদীয়া পত্রিকা। তখন লেটার প্রেসের প্রচলন থাকলেও তার সুযোগ নেওয়া খুব সহজ ছিল না। অর্থের ব্যাপারও মাথায় রাখতে হতো। তখনই হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশের ভাবনা মাথায় আসে। শুরু হয় বিভিন্ন লেখকদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ। সেই লেখা অলঙ্করণের সঙ্গে আর্ট পেপারে লিখে শুরু হলো গ্রামের নিজস্ব শারদীয়া পত্রিকা।

সেই থেকে প্রকাশিত হয়ে চলেছে ‘শারদীয় প্রভাত পত্রিকা’। প্রতিদিন লক্ষ্মীপুজোর দিন প্রকাশিত হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শনিবার রাতে ক্লাব মাঠের মঞ্চে স্থানীয় বিধায়ক অলোক মাজির হাত ধরে উদ্বোধন হলো ৭৭ বছরে পা রাখা শারদীয় প্রভাত পত্রিকার। কর্মসূত্রে গ্রামের অনেকেই থাকেন কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়। এই উদ্যোগে তাঁরাও সামিল হন।

নিজস্ব পরিচিতি কাজে লাগিয়ে তাঁরা জোগাড় করেন শারদীয় প্রভাত পত্রিকার জন্য নামী লেখকদের লেখা। পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে উজ্জ্বল বারিক। বলেন, ‘স্বাধীনতার সময়ে হাতে লেখা পত্রিকার প্রচলন ছিল। গ্রামের প্রবীণরা সেই ধারা চালু করেন। আমরা আজও সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া এর মধ্যে যে কর্মযজ্ঞ তাতে উত্তেজনার রসদও প্রচুর। ডিজিটাল যুগেও আমাদের নতুন প্রজন্ম এই পত্রিকা প্রকাশনায় বেশ আগ্রহী।’

তিনি জানান, এক সময়ে এই পত্রিকার জন্য তাঁরা সংগ্রহ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম, কালিদাস রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নবনিতা দেবসেন, সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। তেমনই আনগুনা গ্রাম ও তার আশপাশের বহু সাহিত্যপ্রেমী তরুণ-তরুণীর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকা এখন তাঁদের কাছে নেশার মতো।

কেমন হয় শারদীয় প্রভাত পত্রিকা? আর্ট পেপার কেটে ৮ ইঞ্চি বাই ১২ ইঞ্চি মাপে তৈরি পত্রিকায় পাতার সংখ্যা দুশোরও বেশি। গুণী শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় পত্রিকা হয়ে ওঠে অত্যন্ত মনোগ্রাহী। এর অলঙ্করণও চোখে পড়ার মতো। এবার পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণ যশ। আর পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন সহ সম্পাদক সায়ন বারিক।

Foodman Chandrasekhar Kundu : পুষ্টিতে ভাষার দূরত্ব ঘোচান ‘ফুড ম্যান’
তিনি বলেন, ‘দুর্গাপুজোর আড়াই মাস আগে থেকে পত্রিকার কাজ আমরা শুরু করে দিই। প্রতিবারের মতো এবারও লক্ষ্মীপুজোর দিন উদ্বোধন হয়েছে পত্রিকার। ক্লাবে সযত্নে রাখা আছে আগের ৭৬টি সংখ্যা।’ তিনি জানান, গ্রামের ছেলেরা পড়ার ফাঁকে এই কাজ করে চলেছে। এবারও কবিতা, গল্প, উপন্যাস গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা পেয়েছে পত্রিকায়। তাঁর কথায়, বয়স যত বাড়ছে আনগুনা গ্রামের শারদীয় প্রভাত সাহিত্য পত্রিকার পরিচিতি ও খ্যাতি ততই বাড়ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version