এই সময়: রেশন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান শুধু রাজ্য পুলিশের স্ক্যানারেই ছিলেন না, তাঁর সংস্থায় হানা দিয়েছিল আয়কর দফতরও। আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল থাকার সন্দেহে আয়কর দফতরের কর্তারা বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নথিপত্রও বাজেয়াপ্ত করেন। রেশন দুর্নীতি মামলায় আর্থিক কেলেঙ্কারির তল পেতে এ বার আয়কর দফতরের সাহায্য নিচ্ছে ইডি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বাজেয়াপ্ত হওয়া সেইসব নথিও।

ইডির দাবি, ওই নথিতে বাকিবুরের এনজিপি রাইস মিল প্রাইভেট লিমিটেড-এর সঙ্গে সরকার অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটারের আর্থিক লেনদেনের তথ্য রয়েছে। আয়কর দফতরে হানা দেওয়ার আগে রেশন দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর করে তদন্তে নামে রাজ্য পুলিশও। পরবর্তী ক্ষেত্রে সেই তদন্ত থমকে যায়। রাজ্য পুলিশের করা এফআইআরের ভিত্তিতেই ইডি এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট (ইসিআইআর) দায়ের করে তদন্তে নামে। গ্রেপ্তার হন বাকিবুর রহমান, পরে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

তরুপের তাস ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটারই

রাজ্য পুলিশ তদন্তে নেমে নদিয়ার বেশ কয়েকজন রেশন ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটারকে গ্রেফতার করেছিল। ইডি সূত্রের খবর, বাকিবুর এবং জ্যোতিপ্রিয়র বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে ওই ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটারদের বয়ানকে হাতিয়ার করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, খোলাবাজারে রেশনের সামগ্রী বিক্রির বদলে ওই ডিস্ট্রিবিউটাররা বাকিবুরের থেকে কমিশন পেতেন নিয়মিত।

২০২০-তে সরকারি স্ট্যাম্প জাল করে রেশনের সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগে প্রদীপকুমার দে-কে গ্রেফতার করে নদিয়ার কোতোয়ালি থানা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বাকিবুরের এনজিপি রাইস মিল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ওই সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। এর পর, ২০২১-এ বিশ্বনাথ প্রামাণিক নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা। জালে পড়েন আসগর মণ্ডল নামে আরেক শাগরেদ।

রেশনের আটা পাচার করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন। এঁদের বয়ান ইতিমধ্যেই নিয়েছে ইডি। কিন্তু পুলিশের জালে ধরা না-পড়া এমন অনেক রেশন ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটার এখনও রয়েছেন, যাঁরা বাকিবুরের ব্যবসার বিষয়ে আরও তথ্য দিতে পারেন বলে মনে করছে ইডি। তাঁদেরও তলবের প্রক্রিয়া শুরু করছেন তদন্তকারীরা।

নথি তলব, মিডিয়ার প্রশ্নে নিরুত্তর প্রিয়দর্শিনী!

রেশন দুর্নীতির অভিযোগে বাবা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, যে তিনটি ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, সেগুলির অন্যতম ডিরেক্টর পদে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনী ও স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক। ইডি সূত্রের খবর, মন্ত্রীর সল্টলেকের বাড়িতে হানা দিয়ে শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড-এর নথিপত্র এবং স্ট্যাম্প উদ্ধার হয়েছে।

তাতে প্রিয়দর্শিনীর সই রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালিয়েছে। ওই সংস্থাগুলির আয়-ব্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে, রবিবার প্রিয়দর্শিনীকে নথিপত্র নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে আসতে বলা হয়েছিল। মিনিট পনেরো ইডি দফতরে থাকার পর বেরনোর সময়ে সাংবাদিকরা তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। অভিযোগ, সেই সময়ে সাংবাদিকদের একরকম ধাক্কা দিয়েই গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি।

আদালতে ইডি দাবি করেছে, ২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় জ্যোতিপ্রিয় তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু ইডির দাবি, পরের বছরই দেখা যায় সেই টাকার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটিতে। মেয়ের অ্যাকাউন্টেও ৪ কোটি টাকা চলে আসে। এই টাকার উৎস কী, তা জানতে চায় ইডি।
Jyotipriyo Mallick : ED স্ক্যানারে ২৫ মোবাইল! রেশন দুর্নীতির ‘খেলা’ ঘোরাতে তৎপর তদন্তকারীরা
ইডি-র নজরে আরও মোবাইলের চ্যাট

দু’টি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সূত্রে মোট ৮০ লাখ টাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে গিয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি। এমন আরও অনেকগুলি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট নজরে রয়েছে গোয়েন্দাদের। বেশ কয়েকটি মোবাইলও ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। কয়েকটি মোবাইলের চ্যাট ডিলিট করে দেওয়া হলেও, সেগুলি রিট্রিভ করার চেষ্টা চলছে বলে ইডি সূত্রে খবর। মন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাস এবং বর্তমান আপ্ত সহায়ক অমিত দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ বিষয়ে বেশ কিছু নতুন তথ্য উঠে এসেছে।

অন্যদিকে দিঘায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর চারটি হোটেলও এ বার তদন্তকারীদের নজর। ওই হোটেলে ঘুর পথে টাকা ঢালা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবার ওই হোটেল সংস্থার ৩ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। যদিও ওই হোটেল গ্রুপের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। অপপ্রচার। ওই হোটেলগুলি থ্রি স্টার ক্যাটেগরির।
Jyotipriya Mallick News : বালু ‘ঋণ’ নিয়েও শোধ দেননি, কোর্টে দাবি ইডির
বালু নিয়ে কম্যান্ড হাসপাতাল উচ্চ আদালতে?

রাজ্যের মন্ত্রীকে ভর্তি নিতে আদালতে আপত্তি জানিয়েছিল আলিপুরের কম্যান্ড হাসপাতাল। বিচারকও পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, তাঁর পক্ষে নির্দেশ বদলানো সম্ভব নয়। সেখানেই জ্যোতিপ্রিয়র মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে। আজ, সোমবার নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন কি না, সেদিকে নজর রয়েছে সব পক্ষের।

এদিকে যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি জ্যোতিপ্রিয়, সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়র বাঁ হাত ও পায়ে সামান্য দুর্বলতা আছে। এর বাইরে আর কোনও বড় সমস্যা নেই মন্ত্রীর। আপাতত স্থিতিশীলই রয়েছেন তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁর হল্টার মনিটরিং হয়েছে। তার রিপোর্ট সন্তোষজনক। হার্টে কোনও গোলমাল পাওয়া যায়নি। এদিন তাঁর মস্তিষ্ক ও সার্ভাইক্যাল স্পাইনের দ্বিতীয় বার এমআরআই হয়।

তাতেও বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি। মন্ত্রীকে আপাতত বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেখছেন। তাঁকে হালকা ডায়াবেটিক পথ্য দেওয়া হচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version