এই সময়: দুর্গাপুজোর মধ্যেই গত বছরকে টপকে গেল এ বছরের ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তা-ই নয়, ডেঙ্গির মরশুম বলে সাধারণত যা ধরা হয়, সেটা শেষ হওয়ার মাস দেড়েক আগেই আক্রান্তের যে সংখ্যা বাংলায় দেখা যাচ্ছে, তা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, ২৪ অক্টোবর, দশমী পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট অন্তত পৌনে এক লাখ মানুষ। শুধু দেবীপক্ষেই ডেঙ্গি পজ়িটিভ চিহ্নিত হয়েছেন হাজার দশেকের বেশি বঙ্গবাসী।

গোটা ২০২২ সালে মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজারের বেশি। যা শেষ এক দশকের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। দেশের মধ্যেও সেটা ছিল সর্বাধিক। এ বার সেই রেকর্ডও হেলায় ভেঙে দিলো চলতি মরসুম। আজ, বুধবার নভেম্বর মাস শুরু হল। এ মাসেও বৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কয়েক পশলা বৃষ্টিই ডেঙ্গি পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলতে পারে।

তাই স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, চলতি মরশুমে মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হয়তো লাখ ছুঁইছুঁই হয়ে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, ডেঙ্গির মরশুম থাকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

* বাংলায় ডেঙ্গির প্রকোপ

# ডেঙ্গির হানা প্রায় প্রতি বছরই।
# ১৮২৪ সালে বাংলায় প্রথম বার ডেঙ্গি ধরা পড়ে। প্রথম বড় ধরনের সংক্রমণ ১৯৬৩ সালে।
# গত শতকের শেষ দশক থেকে ডেঙ্গি নিয়মিত এই রাজ্যে।
# ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু ২০০৬ সালে, যা গত এক দশকে মাত্রা ছাড়িয়েছে।

* ডেঙ্গির সাম্প্রতিক হানা

# ২০২২ সালে ৬৭,২৭১ জন ডেঙ্গি পজ়িটিভ হন রাজ্যে, যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।
# ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ করেনি স্বাস্থ্য দপ্তর। ২০২০ ও ২০২১-এ যথাক্রমে ৫,১৬৬ জন ও ৮,২৬৪ জন ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হয়েছিলেন।
# ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ২০২৩ সালে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৭৬,৪৭৫। চলতি বছর সরকারি ল্যাবে এখনও পর্যন্ত ৪৮,৩১১ জন ও বেসরকারি ল্যাবে ২৮,১৬৪ জন ডেঙ্গি পজ়িটিভ চিহ্নিত হয়েছেন।
# শুধু দেবীপক্ষেই, মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত ৮,৯২৯ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।
Dengue Fever : বেশি ইমিউনিটি প্রাণ নিচ্ছে ডেঙ্গি আক্রান্ত কমবয়সিদের?
* ডেঙ্গি কেন এ বছর বেশি

# এ বছর বর্ষাকালের ঢের আগেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। কালবৈশাখী হয়েছে লাগাতার। মাঝেমধ্যেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের জেরে জল জমার পরিস্থিতি শুরু হওয়ার ফলে ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার দেদার জন্মানোর আবহ তৈরি হয়েছিল বর্ষার আগেই।
# গত বছরের (প্রায় ৯৫০ মিলিমিটার) তুলনায় এ বছর (১২৮২ মিলিমিটার) দেড় গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। বৃষ্টি একদিনে অনেকটা হয়েছে, আবার বাকি সময়টা শুখা থাকেনি। নিয়মিত মাঝারি বৃষ্টি হয়েই গিয়েছে চলতি মরশুমে। ফলে, ডেঙ্গির মশা জন্মানোর অনুকুল পরিবেশ এ বছর অনেকটাই বেশি।

* আরও ভয় যেখানে

# মশার আয়ুবৃদ্ধি বড় মাথাব্যথা। এডিস মশা আজকাল চার সপ্তাহের বদলে ছ’-আট সপ্তাহ বাঁচছে। ফলে, সহজ অঙ্কেই তারা অনেক বেশি সংখ্যক মশার জন্ম দিচ্ছে, যা ডেঙ্গি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
# রয়েছে সচেতনতার ঘাটতিও। জমা জল নিয়ে মানুষ আগের চেয়ে কিছুটা সচেতন হলেও তা এখনও প্রত্যাশিত মানের নয়। ফলে, বাড়ির অন্দরমহলে, আনাচে-কানাচে, সর্বত্রই জল জমছে।
# এডিস মশার বংশবৃদ্ধি হতে পারে না তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলে। সেই অবস্থা বাংলায় আসতে এখনও অন্তত দেড়-দু’মাস দেরি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version