বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ও তার ‘কুপ্রভাব’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে অভিভাবকদের বড় অংশই মনে করেন, রাজ্যে এর জেরে পঠনপাঠনের গুণগত মানের অবনতি হয়েছে। রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সহায়তা/অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলির উপরে একটি পারফরম্যান্স অডিট রিপোর্টে এ বার কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ) একই আশঙ্কা প্রকাশ করল।
গত ৬ অক্টোবর প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের (অডিট ওয়ান) দপ্তরের তরফে রিপোর্টটি রাজ্যের শিক্ষাসচিবের কাছে পেশ করা হয়েছে। স্কুল-শিক্ষকদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া কতটা ঠিক–তা বিবেচনার জন্যেও জোর দিয়েছে ক্যাগ। ‘সরকারি সহায়তা/অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলির শিক্ষকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ’ শীর্ষক অংশটিতে শিক্ষকদের একাংশের নানা স্তরে নির্বাচিত হয়ে একটানা ছুটি নেওয়ার প্রবণতার একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে ক্যাগ-রিপোর্টে।
যেমন, মালদার এক স্কুল-শিক্ষক জেলা পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পর কর্মাধ্যক্ষ হয়ে কী ভাবে স্কুল থেকে লম্বা ছুটি নিয়েছিলেন, তার উল্লেখ করা হয়েছে। বিনা বেতনে তাঁর এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। হাতিমারির একটি হাইস্কুলের সহ-শিক্ষকও ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন পদে নির্বাচিত হয়ে একই ভাবে ছুটি নিয়েছিলেন।
ক্যাগ-এর রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেন্ট সার্ভেন্টস কনডাক্ট রুলস ১৯৫৯-এর ২৬ (১) ও ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মীরা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন রেগুলেশনস ২০০৪ অনুযায়ী সরকারি সহায়তা ও অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলির শিক্ষকরা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন।’
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সরকারি স্কুলগুলির মানবসম্পদ ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুলস ১৯৭১ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত। সেই মতো ওই স্কুলগুলির কর্মীরা সরকারি কর্মী। উল্লেখ্য, ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিসেস (ডিউটিস, রাইটস অ্যান্ড অবলিগেশনস অফ দ্য গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ) রুলস ১৯৮০-এর ৪ ধারায়, সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকলেও তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না বলা হয়েছে।
ক্যাগ-এর অডিটরদের মতে, ‘শিক্ষকদের নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিলে আদতে তা স্কুলগুলির রাজনীতিকরণ ঘটায়। ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের উপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য।’ এক সরকারি কর্তার বক্তব্য, ‘শিক্ষকের প্রাথমিক দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের ভালো করে পড়ানো। তা না করে রাজনৈতিক দলের হয়ে মিটিং-মিছিল করে পড়ানোর কাজে অবহেলা মোটেই কাম্য নয়।
বরং, এই সব সহায়তা/ অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে সরাসরি সরকারি আওতায় আনাই বাঞ্ছনীয়। এতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আঁটসাঁট হবে। পঠনপাঠনের মান ও পরিবেশও উন্নত হবে।’