এই সময়: আশঙ্কাটা ছিলই পরিবেশকর্মী থেকে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই কালীপুজোর রাতে কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলা–রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই দেদার তাণ্ডব চলল বাজির। সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা ছিল, শুধুমাত্র সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে এবং সেটাও রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকা যেটা সরকারিভাবে ‘সাইলেন্ট জ়োন’ বলে চিহ্নিত, সেখানে কোনওরকম বাজি পোড়ানোরই কথা নয়।

কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে কার্যত তুড়ি মেরে উড়িয়ে রাত পর্যন্ত বাজির তাণ্ডব চলল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই। পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণের পর্ষদের আধিকারিকরা বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য অন্য বছরের মতোই কন্ট্রোলরুম খুলেছিলেন, ড্রোন ওড়ানো হয়েছে নিয়ম ভেঙে বাজি পোড়ানোর এলাকা চিহ্নিত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে–কিন্তু সবকিছুর পরেও বাজির দৌরাত্ম্য যে এবারও যে বাগে আনা গেল না, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

যার নিট ফল, বাতাসের দূষণের নিরিখে দিল্লিকে সমান তালে পাল্লা দিল কলকাতা। এর পাশাপাশি পরিবেশকর্মীদের আরও একটা অভিযোগ, যেহেতু সবুজ শব্দবাজির শব্দমাত্রাই ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে, তাই শব্দের তাণ্ডবও চলেছে রাত পর্যন্ত। বাদ যায়নি হাসপাতাল, আবাসিক এলাকাগুলিও।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, তপসিয়ার ফ্লোরা ফাউন্টেনের মতো আবাসিক এলাকায় এদিন রাত সাড়ে ১১টায় শব্দমাত্রা ছিল ৭৩.৭ ডেসিবেলের মতো, বাগবাজারে ৮২.১, কসবা-গোলপার্কে ৮২.১ ডেসিবেল। অথচ বাগবাজার বা ফ্লোরা ফাউন্টেনের মতো আবাসিক এলাকায় রাত ১০টার পরে শব্দমাত্রা থাকার কথা ৪৫ ডেসিবেল, কসবা-গোলপার্কের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় থাকার কথা ৭০ ডেসিবেল।

সেই মাত্রা যে অনেকখানি অতিক্রম করে গিয়েছে, সেটা বলছে পর্ষদের তথ্যই। এমনকী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা আরজি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের চত্বর থেকেও বাজির প্রবল শব্দ পাওয়া গিয়েছে। উত্তরে বিধান সরণি, টালা পার্ক, পাইকপাড়া থেকে দক্ষিণে বালিগঞ্জ, পণ্ডিতিয়া রোড, কাঁকুলিয়া, ঢাকুরিয়া, কসবা, গড়ফার মতো এলাকাতেও বাজির তাণ্ডব চলেছে যথারীতি।

সল্টলেকের অনেক ব্লকেও গভীর রাত পর্যন্ত মুহুর্মুহু বাজির শব্দে কান পাতা দায় হয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। নিয়ম ভেঙে বাজি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২২ জনকে। তবে তাতে দূষণের গ্রাফে বড় একটা বদল হয়নি।

এদিন সন্ধ্যায় টালিগঞ্জের একটি হাসপাতাল থেকে আশপাশে দেদার বাজি পোড়ানোর অভিযোগ জানানো হয় পর্ষদে। যদিও তার পরে রাত ১০টা পর্যন্তও বাজির তাণ্ডব বন্ধ হয়নি। পর্ষদের কাছে পর্ণশ্রী, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, সল্টলেক এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। ‘সবুজ মঞ্চ’-এর কন্ট্রোলরুমে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫টি অভিযোগ জমা পড়ে।

‘সবুজ মঞ্চে’র সাধারণ সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘শহরের হাসপাতালগুলির এত খারাপ অবস্থা গত কয়েক বছরে দেখিনি। একমাত্র এসএসকেএম হাসপাতাল ছাড়া বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলির অবস্থা ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হয়। এনআরএস হাসপাতালে স্টাফ কোয়ার্টার্সের মধ্যে, লেডিস হস্টেলের সামনে ৫০-৬০ জনকে দেদার বাজি ফাটাতে দেখলাম। আমরা এন্টালি থানায় অভিযোগ করেছি। আরজি কর হাসপাতালেও একই ছবি।’

Diwali Pollution: নজরদারিকে ‘কাঁচকলা’ দেখিয়ে কালীপুজোর রাতে শব্দদানবের দাপট, গ্রেফতার ৪৪৪ জন
যদিও পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র রাতে বলেন, ‘এবার বাজির দাপট কিছুটা কম বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের চারটে ড্রোন শহরের উত্তর-দক্ষিণ-সল্টলেক এবং হাওড়ায় নজরজারি চালাচ্ছে। আর ছ’টি দল ঘুরছে রাস্তায়। এখনও পর্যন্ত শব্দের দাপট কমই বলতে হবে।’

শুধু শব্দই বা কেন, বাতাসের দূষণের নিরিখেও অন্তত কালীপুজোর রাতে দিল্লিকে সমান তালে পাল্লা দিয়েছে কলকাতা। আদালতের নির্দেশে সবুজ বাজি পোড়ানোর ফলে খাতায়কলমে দূষণের মাত্রা কতটা কমলো, সেটা চূড়ান্ত রিপোর্ট সামনে আসার আগে বোঝা মুশকিল। তবে এদিন পর্ষদের রেকর্ড বলছে, রাত যত গড়িয়েছে, ততই বাতাসের দূষণের মাত্রায় কলকাতা ও দিল্লির বিভিন্ন এলাকার ফারাক খুব একটা ছিল না।

Firecrackers : বজ্র আঁটুনিতেও ফস্কা গেরো! দীপাবলিতে রাত বাড়তেই শব্দদানবের তাণ্ডব, শুরু ধরপাকড়
এমনকী বাজির ধোঁয়ায় দৃশ্যমানতাও এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে হাওড়া ব্রিজও প্রায় দেখা যাচ্ছিল না। রাত ১২টা নাগাদ কলকাতায় বালিগঞ্জ, ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম-২.৫ এর মাত্রা কোথাও ৩৫০, কোথাও ৪৫০-তে পৌঁছে যায়। ফলে বাতাসের গুণমান রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version