এই সময়: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন। অভিযোগকারী মহিলাকে আরও ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচও ফেরাতে হবে হাসপাতালকে। গত ৬ নভেম্বর কমিশনের সভাপতি, বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডল এবং দুই সদস্য সমীক্ষা ভট্টাচার্য ও শ্যামলকুমার ঘোষ এই নির্দেশ দেন।

হাওড়ার আন্দুলের ওই হাসপাতালকে ৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। না হলে ক্ষতিপূরণের মোট অঙ্কের উপর বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এ ছাড়া আইনি লড়াইয়ের জন্য অভিযোগকারিণীকে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

অভিযোগকারিণীর নাম চন্দ্রা পাল। বাড়ি হাওড়ার ব্যাঁটরার নরসিংহ দত্ত রোডে। ঘটনাটি ২০১৩ সালের। চন্দ্রার স্বামী সোমেন্দ্রনাথ পালকে সে বছর ৩০ মে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার আগে চার দিন ধরে জ্বর ছিল, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসক সঞ্জয়কুমার সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসক জানান, সোমেন্দ্রনাথ সিওপিডি-তে আক্রান্ত। তাঁকে নন ইনভেসিভ আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়।

১ জুন রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট জানায়, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ৩ এবং ৮ তারিখের এক্স-রে রিপোর্টে জানা যায়, ফুসফুসে ‘প্যাচ’ রয়েছে। এর পরেই তাঁর এন্ডোট্র্যাকিয়াল ইনটিউবেশন (মুখের মধ্যে দিয়ে গলায় নলের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা) করা হয়। সে দিনই তাঁকে ‘মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন’ সাপোর্ট দেওয়া হয়। তখনই ধরা পড়ে, রোগীর শরীরে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতেই চন্দ্রার স্বামী ‘ন্যাসোকোমিয়াল ইনফেকশন’-এর শিকার হন। শুধু হাসপাতালে ভর্তি অবস্থাতেই এ ধরনের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।

চন্দ্রার অভিযোগ, এর পর থেকে সোমেন্দ্রনাথের অবস্থার অবনতিই হয়েছে। ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় তিনি যখন স্বামীকে দেখতে যান, তখন সোমেন্দ্রনাথ ভয়ঙ্কর ভাবে হাঁপাচ্ছিলেন। ‘মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন’ও খুলে ফেলা হয়েছিল। তিনি নার্সদের ডাকাডাকি করলেও কেউ আসেননি বলে অভিযোগ। ৬ জুলাই হাসপাতাল জানায়, আগের দিন রাত ন’টায় সোমেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছে। চন্দ্রার অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়ে এবং তাঁর অনুমতি ছাড়াই ‘মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন’ খোলা হয়। এর পরে একাধিক বার হাসপাতালের কাছে চিকিৎসার নথি চেয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় চন্দ্রাকে।

২০১৫-র জুলাইয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ জানান ওই মহিলা। প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন তিনি। চিকিৎসক সঞ্জয়কুমার সাহা শুনানিতে হাজির না হওয়ায় একতরফা নির্দেশে তাঁকে ২০ হাজার টাকা মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তিনি হাজির হয়ে নতুন ভাবে আবেদন করে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন রোগী যে শ্বাসযন্ত্রের দুরারোগ্য সংক্রমণের শিকার হন, তা প্রমাণিত হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version