এই সময়, মেদিনীপুর: এ যেন অনেকটা বহরমপুরের সুতপা কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি! তবে এক্ষেত্রে প্রাণরক্ষা হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ছাত্রীর উপরে ছুরি নিয়ে হামলা চালাল যুবক। তা-ও আবার একেবারে স্কুল ক্যাম্পাসেই। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন বাবাও। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানা এলাকায়। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। তাই মেয়েকে স্কুলে দিতে এসেছিলেন বাবা। বুধবার ছিল টেস্ট পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন। মেয়ে স্কুলগেট দিয়ে ভিতরে ঢোকা পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। পিছন ফিরেছিলেন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে। হঠাৎ কানে আসে মেয়ের চিৎকার। একদৌড়ে স্কুলে ঢুকে দেখতে পান, মেয়ের উপরে ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এক যুবক। বাঁচাতে গেলে ওই যুবক ছাত্রীর বাবাকেও দু’তিন বার ছুরির কোপ মেরে জখম করে।

স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরেই এমন ঘটনায় হকচকিয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। ভয় পেয়ে যায় অন্য পড়ুয়ারাও। তবে সবাই মিলে পাকড়াও করেন যুবককে। তার কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে আহত যুবককে আটক করে নিয়ে যায়। স্কুলের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পরে ছাত্রীর বাবাও অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেপ্তার করা হয় বছর কুড়ির গোবিন্দ বিশ্বাসকে। গড়বেতার খড়কাটা গ্রামের বাসিন্দা সে। আহত বাবা ও মেয়েকে প্রথমে দ্বারিগেড়িয়া হাসপাতাল ও পরে গড়বেতা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

বছর খানেক আগে এই যুবকের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল নাবালিকা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়। পরে বাড়িতেও ফেরে সে। বাবা-মায়ের বোঝানোর পরে সে ফের স্কুল যেতে শুরু করে। আর সেই সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছিল নাবালিকা। মন দিয়ে পড়াশোনা করছিল।

ইদানীং যুবককে এড়িয়েই চলছিল সে। তাতেই প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার একসময়ের প্রেমিক। পিছনের দরজা দিয়ে স্কুলে ঢুকে ঘাঁপটি মেরে ছিল যুবক। এ দিন নাবালিকা স্কুলে ঢুকতেই তার উপরে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় সে। ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে স্কুলে পাঠানো শুরু করেছিলাম। ও বুঝতেও পেরেছিল। ছেলেটা এ রকম কিছু করবে আশঙ্কা করেই ওকে রোজ স্কুলে দিয়ে আসি, ছুটির সময় বাড়ি নিয়ে আসি। আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। ছেলেটার উপযুক্ত শাস্তি চাই।’
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী ও যুবকের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। ইদানীং মেয়েটি ছেলেটিকে আর পাত্তা না দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতেই এমন ঘটনা ঘটায়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ‘যেহেতু স্কুল ক্যাম্পাসে ঘটনা ঘটেছে, তাই স্কুলের তরফ থেকে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করা হয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version