এই সময়: আইটি চাকুরে পার্থ বসু আদতে শিলিগুড়ির বাসিন্দা। বছরসাতেক আগে বেঙ্গালুরু থেকে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের একটি সংস্থায় চাকরি নিয়ে আসেন। সেই থেকে করুণাময়ী এলাকায় একটা বাড়িতেই ভাড়াটে হিসেবে বাস করছেন তিনি। সল্টলেকের মতো অভিজাত এলাকায় স্বাভাবিকভাবে ভাড়ার অঙ্ক একটু বেশিই। ফি বছর তা বেড়ে চলে ১০ শতাংশ হারে। তবে পার্থ একটা বিষয়ে নিশ্চিন্ত, বাড়ির কোনও মেরামতির দরকার হলে, দ্রুত তা করে দেন মালিক। যেহেতু ভাড়ার অঙ্ক বেশি, তাই মেরামতিটা বাড়ির মালিকের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।

পার্থ থাকেন একটি তিন কামরা বাড়ির দোতলায়। মাস গেলে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হয়। সেখান থেকে দু’তিন কিলোমিটার দূরে সল্টলেকেরই ফাল্গুনী আবাসনের ৩৩৬ টি ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়ার পরিমাণ ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন, সেই টাকাও ঠিকমতো আসে না। ফলে এই বৃহৎ আবাসন মেরামতিতে যে অর্থের প্রয়োজন, তার সংস্থান করতে নাজেহাল অবস্থা হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। তা হলে ভাড়াটেরা যে ফ্ল্যাট বেচে দেওয়ার দাবি তুলেছেন, সেটাই বা হচ্ছে না কেন?

একেবারে যে হয়নি তা নয়। সরকারি সূত্রের খবর, বাম আমল এবং তৃণমূল জমানার প্রথম কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি আবাসন ভাড়াটেদের বিক্রি করা হয়েছিল। অভিযোগ, ২০১৪ সালের পর থেকে নতুন করে আর কোনও ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি। রাজ্য সরকারের তরফে বছর তিনেক আগে সরকারি আবাসন ভাড়াটেদের বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হলেও, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনও চিঠি আসেনি বলেই জানাচ্ছেন আবাসিকেরা।

আবাসন ও পুর দপ্তর সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে সরকারি আবাসনগুলি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সংস্কার করে বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তার পরের পর্যায় অস্পষ্ট এবং ধোঁয়াশাচ্ছন্ন- সেটা দু’তরফেই। ভাড়াটেরা বলছেন, তাঁরা ফ্ল্যাট কিনতে চান। আবার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আবাসিকদের অনেকেই তা চান না। ফলে এক যাত্রায় পৃথক ফল কী করে হবে? ‘আসলে পুরো বিষয়টিই ভীষণ জটিল হয়ে পড়েছে’। বলছেন আবাসন দপ্তরের এক কর্তা।

সরকারি ওই কর্তার বক্তব্য, ‘সমস্যা যে রয়েছে, তা সকলেই জানেন। এখন প্রয়োজন হলো সমাধানের রাস্তা খোঁজা। এর দুটি দিক রয়েছে। এক, সংস্কার করে ওই ফ্ল্যাটগুলি বাজারমূল্যে ভাড়াটেদেরই বিক্রি করা। দুই, যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থাতেই মূল্যের বিনিময়ে ফ্ল্যাটের হস্তান্তর। কারণ, সংস্কার করতে গেলে ভাড়াটেদের কোথায় রাখা হবে, সেই সমস্যার সমাধানও ভীষণ জটিল।

আবার অন্য অভিযোগও রয়েছে। আবাসিকদের একাংশ তেমন সাড়া দেয় না। কারণ, ফ্ল্যাট হস্তান্তর হলে তাঁর রক্ষণাবেক্ষণের ভার এসে পড়বে ফ্ল্যাট মালিকদের উপরেই। পুরোনো এই আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হবে আকাশছোঁয়া। অর্থাৎ এখন যে অঙ্কের ভাড়া গুণতে হয়, প্রতি মাসে তার দ্বিগুণেরও বেশি টাকা মেনটেন্যান্স হিসেবে দিতে হবে। আর মেরামতির জন্য এককালীন গুণতে হবে মোটা অঙ্ক। এ তো গেল একটা দিক, অন্যদিকে আবাসনের বিশাল জমির কী হবে, তারও নির্দিষ্ট কোনও সমাধান হয়নি। সেই জমি মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি লিজ়-এ দেওয়া হবে, নাকি তারও মালিকানা ফ্ল্যাট মালিকদেরই দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত অথৈ জলে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version