সন্ধ্যা ৭টা বেজে ৫৩ মিনিট। টিভির পর্দায় তখন জ্বলজ্বল করছে সুড়ঙ্গ থেকে বেরোনো শ্রমিকদের ছবি। তবে কিছুতেই যেন সেই ছবি স্পষ্ট হচ্ছে না চোখের সামনে। হবে কি করে? চোখের জল যে বাঁধ মানছে না। টানা ১৭ দিন পর শ্রমিকদের বেরিয়ে আসার খবরটা শুনে ধরে প্রাণ ফিরেছে মানিক তালুকদারের স্ত্রী সোমা দেবীর। একই চিত্র হুগলির পাখিরা ও প্রামাণিক পরিবারেও।

অন্ধকারাচ্ছন্ন দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে লড়াই করেছেন মানিক তালুকদার, সৌভিক পাখিরা, জয়দেব প্রামাণিকরা। যমে মানুষে টানাটানির সেই লড়াইয়ের আঁচ এসে পড়েছিল প্রত্যেকের বাড়িতেও। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধুই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। ‘ঠাকুর ওঁরা যেন সুড়ঙ্গ থেকে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসে’। অষ্টপ্রহর সেই প্রার্থনা করে গিয়েছেন সকলে।

কোচবিহারের বাসিন্দা মানিক তালুকদারের পুত্র মণি তালুকদার বলেন, ‘আমার দাদা ওখানে রয়েছেন। ফোনে কথা হয়েছে। বাবা নিরাপদে বেরিয়ে এসেছেন। এখন ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটা স্বস্তি লাগছে। এবার বাড়ি ফিরলে আরও শান্তি পাব।’ বলতে বলতেই চোখে জল এসে গিয়েছিল ইলেকট্রিশিয়ান কর্মীর ছেলের চোখে।

Uttarkashi Tunnel Collapse : অবশেষে আশার আলো! ১৭ দিন ধরে অন্ধকূপে আটকে শ্রমিকরা, প্রকাশ্যে ছবি
অন্যদিকে, হুগলির জেলার দুই বাসিন্দা সৌভিক পাখিরা ও নিমডাঙ্গির বাসিন্দা জয়দেব প্রামাণিকের বাড়ির চিত্রটাও একই। এদিন সন্ধ্যা বেলায় জয়দেব প্রামাণিকের বাড়িতে হাজির হন তৃণমূল সাংসদ অপরপা পোদ্দার। জয়দেবের মাকে নিজের হাতে জল খাইয়ে দেন তিনি। দু’ঢোক জল গলা দিয়ে নামতেই যেন প্রাণ ফিরে পেলেন তিনি। ছেলে বেরিয়ে আসার খবর শুনে এখন কেমন লাগছে? সৌভিকের মা তপতী দেবী গলায় কুণ্ডলী পাকিয়ে এসে কান্না চেপে শুধু বললেন, ‘ঠাকুর কথা রেখেছেন, শান্তি পেলাম।’

টানা ১৭ দিনের মরণপণ লড়াই। আশঙ্কা, উৎকন্ঠা, আতঙ্ক পেরিয়ে মঙ্গলের সন্ধ্যাতেই এল মাহেন্দ্রক্ষণ। উত্তরকাশীর ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গ থেকে এক এক করে বেরিয়ে এলেন আটকে পড়া শ্রমিকরা। বাইরে প্রস্তুত ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। প্রস্তুত রাখা ছিল গ্রিন করিডোর। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার পরেই তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ সংগ্রামের পর রক্ষা হল কোটি কোটি দেশবাসীর প্রার্থনা, মিটল সৌভিক, জয়দেব এবং মানিক তালুকদারের পরিজনদের উৎকন্ঠাও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version