এই সময়, শ্রীরামপুর: পরীক্ষায় ফেল করব, তাই কাজের খোঁজে যাচ্ছি—এমনটাই চিঠিতে লিখে মোবাইলের সমস্ত ডেটা ডিলিট করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল শ্রীরামপুরের সাত পড়ুয়া। তার মধ্যে পাঁচজন নাবালিকা। দুই নাবালক সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের তৎপরতায় শুক্রবার রাতেই আরামবাগ থেকে ওই সাত পড়ুয়াই উদ্ধার হয়েছে।

শ্রীরামপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের সমস্ত আইডি ডিলিট করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল শ্রীরামপুরের সাত জন। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের ডিলিট হওয়া চ্যাট উদ্ধার করার পর সব পরিষ্কার হয়। শনিবার ভোরে হুগলির আরামবাগ-বাঁকুড়া সীমানার কোতুলপুর থেকে ওই সাত জনকে উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকার এক তরুণীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা। তাঁকে কোতুলপুর থানার পুলিশ আটক করেছে। জানা গিয়েছে, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে পড়ুয়াদের আলাপ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পড়ুয়ারা সবাই আলাদা আলাদা স্কুলে পড়ত। কাছাকাছি বাড়ি ও পড়তে যাওয়ার সুবাদে তাদের একে অপরের সঙ্গে আলাপ। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ তাদের বাড়ি থেকে চিঠিগুলি উদ্ধার হয়। সকলের চিঠিতেই লেখা ছিল, ‘পরীক্ষায় ফেল করব। তাই কাজ করব। ১৮ বছর হলে বাড়ি ফিরব। আমার জন্য তোমরা অনেক কষ্ট করেছ। আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবে না। পুলিশের কাছে গিয়েও লাভ হবে না।’ এই বয়ানে চিঠি লিখেই কেউ খেলতে যাচ্ছি, কেউ পড়তে যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।

চিঠি উদ্ধারের পরেই নিখোঁজ ছেলেমেয়েদের পরিবার শ্রীরামপুর থানার দ্বারস্থ হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিখোঁজ ছাত্রছাত্রীদের পরিবারগুলি দরিদ্র। বাবা-মাকে কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারা বাবা-মায়ের মোবাইল ব্যবহার করত। ঘটনার দিন পড়ুয়ারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ও মোবাইলে থাকা যাবতীয় নম্বর ডিলিট করে পরিকল্পিত ভাবে বাড়ি ছাড়ে। কেউই মোবাইল সঙ্গে নেয়নি। তাই নিখোঁজদের সন্ধান পেতে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। শ্রীরামপুর থানার আইসি দিব্যেন্দু দাসের নেতৃত্বে তিনটি দলে পুলিশ কর্মীরা ভাগ হয়ে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, একটি দল তাদের মোবাইল পরীক্ষা শুরু করে। ডিলিট হওয়া ডেটা উদ্ধার করা হয়। এসআই সৌমেন নাথ ছাত্রছাত্রীদের পরিচিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ শুরু করেন। আর একটি দল বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে থাকে। মুছে ফেলা হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট উদ্ধারের পর পুলিশ আরামবাগের একটি সূত্র পায়। সেই সূত্র ধরে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ গভীর রাতে আরামবাগের শেষ সীমানা বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার একটি বাড়ি থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধার করে। ওই বাড়ি থেকে এক তরুণীকেও আটক করে পুলিশ। তরুণীর দাবি, পড়ুয়াদের তিনি একটি চাউমিনের কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করে ছিলেন।

উদ্ধার হওয়া এক ছাত্রীর আত্মীয় বলেন, ‘পুলিশ অসাধ্য সাধন করেছে।’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পণ্ডিত জাভালগি বলেন, ‘একটা দুর্দান্ত দলগত কাজের জন্যই পড়ুয়াদের সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে উদ্ধার করা গিয়েছে। পুলিশের কাছে কাজটা খুব কঠিন ছিল।’ এ দিন শ্রীরামপুর আদালতের নির্দেশে উদ্ধার হওয়া ছাত্রদের হরিপালে ও ছাত্রীদের উত্তরপাড়া হোমে পাঠানো হয়। পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Malda News : স্কুলে যাওয়ার পথে মালদায় নিখোঁজ ৩ ছাত্রী! ৬ দিনেও মেলেনি খোঁজ, উৎকণ্ঠায় পরিবার
শ্রীরামপুরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘করোনার সময় পড়ুয়াদের ক্ষতি হয়েছে। পড়ার সঙ্গে অনেকেরই দূরত্ব বেড়েছে। তা দূর করতে এবং পড়া থেকে ভয় কাটাতে বাড়তি ক্লাস এবং ছোট ছোট পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু অনেক অভিভাবকদের থেকে সাড়া মেলেনি। তাতে পড়ুয়াদের উপর প্রভাব পড়েছে। পড়ার প্রতি ভয় বেড়েছে।’ বাবা-মায়েদের সন্তানকে খেলাধুলো ও ভালো বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর পরামর্শ দেন পুলিশকর্তারা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version