অভাব তাড়া করে বেরিয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপে। তবে দৃঢ় সংকল্প আর জেদ দমাতে পারেনি তাঁর সাফল্যকে। কঠোর পরিশ্রম তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের দোরগোড়ায়। কুস্তিতে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ভারতের হয়ে সোনা জয় করল উত্তর দমদম নিমতার ছেলে অভিষেক গুপ্তা। শত কষ্টের মাঝেও ছেলের সাফল্যে খুশি গোটা পরিবার।

বাস্তবের সুলতান

নিমতার অভিষেক যেন আজ হয়ে উঠেছে বাস্তবের ‘সুলতান’। দারিদ্রতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিনের লড়াইকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও নিজের মানসিক জেদ আর ইচ্ছা শক্তির দ্বারা সেই লড়াই জয় করেছেন অভিষেক। আজ আন্তর্জাতিক স্তরে সাউথ এশিয়ান গেমসে কুস্তিতে সোনার পদক ছিনিয়ে আনল বাংলার গর্ব অভিষেক গুপ্তা।

পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা

দারিদ্রতার সংসারে ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনার গণ্ডিতে আটকে থাকলেও, বিটেক কমপ্লিট করে নিজের শরীর সচেতনতার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন জিমে। সেই থেকেই শুরু শরীর চর্চা। তবে সরকারি বেসরকারি দুই তরফে চাকরির চেষ্টা চালালেও, সেভাবে এখনো সফল হননি অভিষেক। বাড়িতে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, সংসার চালানোর তাগিদ থেকেই এরপর নিজেকে কিছু করে দেখানোর জেদ তৈরি হয় অভিষেকের মনে। আর সেই থেকেই কিক বক্সিং দিয়ে খেলার জগতে প্রবেশ।

কিক বক্সিংয়ে ন্যাশনাল লেভেলেও যান বিরাটির এই যুবক। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এই যুবকের শরীর চর্চা ও খাদ্য তালিকায় তেমন কোনও দামি খাবার জোটেনি কখনওই। তবু যেটুকু সামর্থ্য তার মধ্যে থেকেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছে তিনি। যে কথা বলতে গিয়ে রীতিমত চোখের জল অভিষেকের বাবা অভিজিৎ গুপ্তর চোখেও। সামান্য বেসরকারি কাজ করলেও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন বাড়িতেই থাকেন তিনি। ছেলের এই লড়াইয়ে মানসিকভাবে সঙ্গে থাকলেও আর্থিকভাবে তেমন কোন সাহায্য করতে পারেন না বলে আক্ষেপের সুর বাবার গলায়।
মা কাকলি দেবী অবশ্য গৃহবধূ। আন্তর্জাতিক স্তরে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে, ছেলে ঘরে ফেরায় রীতিমতো ছেলেকে ঘিরেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বাবা-মা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের মত ৮ টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশকে হারিয়ে সোনা জয় অভিষেকের।

কী জানালেন অভিষেক?

অভিষেক জানান, 2022 ন্যাশনাল রেসলিং-এ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই সময় জোটেনি পদক। তবে এবার সাফল্য মিলতেই যেন আরও জেদ চেপে বসেছে রেসলিং এ বাংলাদেশকে হারানো এই খেলোয়াড়ের মনে। পরবর্তী লক্ষ্য ওয়ার্ল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে স্বপ্ন দেখলেও তা কতটা বাস্তব রূপ পাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে আশঙ্কার মেঘ। কারণ পরবর্তী পর্যায়ে এগোতে প্রয়োজন অনেকটাই অর্থের। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবন যুদ্ধে নিজের অবস্থার সঙ্গে লড়াই চালানো বাংলার এই কুস্তিবিদের কাতর আবেদন পাশে দাঁড়াক সরকার, মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়া দফতর।

Post Graduation Course : বাড়িতে কুকুর-বিড়াল-গোরু-হাঁস-মুরগির আস্তানা, সব সামলে MA পাশ ৪৫-র মহিলার
তাহলে বাংলার মুখ আরও উজ্জ্বল করতে পারবে বিরাটির এই যুবক অভিষেক গুপ্তা। খেলার পাশাপাশি সংসার চালাতেও আজ ডিফেন্স থেকে পুলিশ যে কোন চাকরির জন্যই প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে স্থানীয় একটি জিমে ট্রেনারের কাজ করে নিজের খেলার প্রয়োজনীয় খরচা তুলতে হয় অভিষেককে। রেসলিং এর ময়দানে প্রতিপক্ষ দলের থেকেও, এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন। সেক্ষেত্রে সরকারি ভাবে অর্থ সাহায্য না মিললে ওয়াল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ হয় তো অধরাই থেকে যাবে বাংলার এই যুবকের কাছে। বাস্তবের এই সুলতান তার ইচ্ছা শক্তি তার লক্ষে পৌঁছে দিতে পারবে, এমনটাই আশা সকলের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version