গত শুক্রবার রাতে রাজভবন থেকে রাজ্যপাল নিযুক্ত ভিসিদের হঠাৎ চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যপাল-আচার্যই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার শেষ কথা। তিনিই ভিসিদের নিয়োগ কর্তা। তাঁর হাতেই রয়েছে রিঅ্যাপয়েন্টমেন্টের ক্ষমতা। এ ছাড়াও চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, কাউকে নিয়োগ করার পাশাপাশি তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অধিকারীও একমাত্র রাজ্যপাল-আচার্য।
উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রের দাবি, গত কয়েক মাসে ধীর গতিতে হলেও রাজ্যপাল নিযুক্ত অনেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাইছেন। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরাও অবশ্য সেই ডাকে একেবারে সাড়া না দিয়ে বসে নেই। এই পরিস্থিতিতে যাদবপুরের অপসারিত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের রাস্তায় আর যাতে কেউ না যান, সে কথা মনে করাতেই কি রাজভবনের এমন চিঠি?
গত এক বছরে ধাপে ধাপে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই নিয়োগ একতরফা ভাবে করা হয়েছে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু মাসছয়েক কাটতে না কাটতেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বুঝতে পারছেন, রাজ্যপাল তাঁদের নিয়োগ করলেও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সাহায্য ছাড়া প্রশাসন পরিচালনা করা কার্যত অসম্ভব।
বেতনখাতে টাকা বন্ধ হয়নি ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের দাবি, রাজ্য সরকার অন্যান্য বহু খাতের টাকার প্রবাহে বাধা দিয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করাই একরকম দায় হয়ে উঠেছে।
যাদবপুরের সমাবর্তনের ইস্যুকে সামনে রেখে রাজ্যপাল নিযুক্ত ভিসি বুদ্ধদেব দেখা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই একই পথে হেঁটে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অনেক কর্তার সঙ্গেই রাজ্যপালের ভিসিরা যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। রাজ্যের প্রাক্তন উপাচার্যদের সংগঠন দ্য এডুকেশনিস্ট ফোরামের তরফে ওমপ্রকাশ মিশ্র মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আচার্যের মামলা লড়ার জন্য কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ‘বেআইনি’ ভাবে টাকা আচার্যকে দেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার একটি তদন্ত শুরু করেছে।
সেই তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে রাজ্যপালের উপাচার্যদেরও। তাই ওমপ্রকাশের দাবি, ‘বেনিয়মগুলি ফাঁস হয়ে যাবে বুঝতে পেরে রাজভবন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই ফের মনে করাতে হচ্ছে তিনিই নিয়োগকর্তা, তিনিই সব। যদিও সেই দাবি স্বপক্ষে আচার্য কোনও আইনকেই সামনে আনতে পারেননি।’ প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষের বক্তব্য, ‘রাজ্যপাল আসলে প্র্যাকটিক্যাল একটা কথা বুঝতে পারছেন না।
রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকারের বা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। ফলে তাঁর বসানো ভিসিদের অনেকেই এখন সেটা বুঝতে পারছেন।’ যদিও যে যাদবপুরকে সামনে রেখে এত বিতর্ক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটার সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘রাজভবন আর বিকাশ ভবন— বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই নিয়ে লড়াই চলছে। অথচ কেউই বলছেন না, বিশ্ববিদ্যালয় বা উপাচার্যরা কারওর নিয়ন্ত্রণে নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট বা আইন মেনেই কাজ করবেন।’