এই নতুন প্রজন্মের কাঁধে ঘুরে দাঁড়ানোর দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে জোড়াফুল ও পদ্মফুল শিবিরে চলে যাওয়া জনতাকে বামেদের দিকে ফেরানোর দায়িত্বও সঁপে দিতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেরা কাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করবে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি সিপিএম নেতৃত্ব। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে বিধানসভায় শূন্য হয়ে গিয়েছে বামেরা।
বারবার অভিযোগ উঠেছে, পক্ককেশ অভিজ্ঞ নেতারা সংগঠনের পদে বসে থেকেছেন আর নিচুতলায় বিরোধী বামেদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে নবীন প্রজন্ম। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম সিপিএম একদল নবীন মুখকে প্রার্থী করে। এবার সেই প্রজন্মের হাতেই বামেদের পুনর্জাগরণের দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছেন সেলিম।
ব্রিগেডে রবিবার ১৬ বছর পর ডিওয়াইএফআই-এর সমাবেশে প্রাক্তন যুব নেতা সেলিম বলেন, ‘বাংলায় যে ভূত বাস করছে, সেই ভূতকে তাড়াতে হবে। সেই ভূত তাড়াতে আমরা যৌবনকে খুঁজছি। এই বাংলার একটি প্রজন্ম চাই—যারা বাংলার ও বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাবে। এই পুনর্জাগরণ মানে কলকারখানা নির্মাণ, কর্মসংস্থান তৈরি করা, সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত, শিক্ষার নতুন ব্যবস্থা তৈরি করা।’
সেলিম যখন এই বার্তা দিচ্ছেন, তখন মঞ্চে তাঁর চারপাশে মীনাক্ষী, হিমঘ্নরাজ, সৃজন, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, কলতান-সহ নতুন প্রজন্মের ভিড়। মঞ্চের সামনে দর্শকাসনে বসে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ প্রবীণরা। নবীন ব্রিগেডকে এগিয়ে দিয়ে সেলিম-সুজন চক্রবর্তী-শমিক লাহিড়িদের প্রজন্মকে মেন্টরের ভূমিকায় থাকার বার্তা দিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সেলিমের কথায়, ‘এই লড়াই ভবিষ্যতের জন্য লড়াই, সবে ভবিষ্যতের কুঁড়ি ফুটেছে। শতপুষ্প বিকশিত হোক। আমরা মালির কাজ করব। আমরা সার দেবো, কিন্তু এই লড়াই মীনাক্ষীরা যা বলল, পাড়ায় গিয়ে বুথ গিয়ে করতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা ট্রেলার দেখিয়েছি, লোকসভা নির্বাচনে ফাইনাল দেখাতে হবে।’
এই মালির কাজ কী ভাবে করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট? ভরা ব্রিগেডের মঞ্চে সেলিম বলেন, ‘এটা বীজতলা। যাঁরা চাষবাস জানেন, তাঁরা বীজতলা জানেন। ধান চাষের আগে বীজতলা করতে হয়, অঙ্কুরোদ্গম হয়, চারা লাগাতে হয়, তারপর মাঠে রোপণ করতে হয়। সেচ দিতে হয়, জন্তু জানোয়ার থেকে বাঁচাতে হয়, তারপর কাস্তেতে শান দিতে হয়, তারপরে ফসল তোলা যায়।’ আলিমুদ্দিন নবীন প্রজন্মকে এগিয়ে দিতে চাইলেও একে গুরুত্ব দিতে চাইছে না তৃণমূল।
জোড়াফুলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘প্রবীণ-নবীন যাই হোক, বামফ্রন্ট মানে সন্ত্রাসের লাল চোখ। বামফ্রন্ট মানে অত্যাচারের ৩৪ বছর। বামফ্রন্ট মানেই মানুষের প্রত্যাখ্যান। তাই আগামী দিনে বামফ্রন্টের দুই হাতে দু’টো লাড্ডু থাকবে।’ নবীন প্রজন্মের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিলেই যে ঘুরে দাঁড়ানোর সব অঙ্ক মিলে যাবে না, তা অজানা নয় বাম নেতৃত্বের। তাই তৃণমূল ও বিজেপির নিচুতলার যে কর্মী-সমর্থকরা হতোদ্যম হয়েছেন, সেই অংশকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে চাইছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
এই অংশের উদ্দেশে মীনাক্ষী এ দিন বলেন, ‘তৃণমূল-বিজেপিকে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। যাঁরা ভেবেছিলেন, আকাশ থেকে ফরিস্তা এসে পরিবর্তন করবে। কিন্তু কে বিজেপি? নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো তৃণমূলের নেতাগুলো বিজেপিতে গিয়েছে। এই দলগুলোর নেতারা চাল চুরি, গোরু পাচার করেছে। তাই যা প্রত্যাশা করেছেন, পূরণ হবে না। আপনাদের প্রতি আমাদের হাত বাড়ানো রইল। যদি মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চান, আসুন লড়াইয়ের ময়দানে।’
যদিও শান্তনুর বক্তব্য, ‘রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পাশেই রয়েছেন। বরং বামের ভোট রামে গিয়েছে।’ বামেদের অবশ্য দাবি, গীতাপাঠের নাম করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। সেলিমের কথায়, ‘আরও মানুষের কাছে যেতে হবে। হিজাব পরে, গীতা পাঠ, চণ্ডীপাঠের নাম করে যাঁদের ভুল বোঝানো হচ্ছে, যাঁদের ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে—তাঁদের কাছে যেতে হবে।’
পুরোনো ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে সেলিমরা এই বার্তা দিলেও রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘উনি তো গীতার বিরোধী। সেলিম রোহিঙ্গাদের পক্ষে। রাজ্যের তৃণমূল ও বিজেপিরই লড়াই হবে। এই বাইনারিই থাকবে।’