এই সময়, বর্ধমান: নতুন পরিবহণ আইনের বিরোধিতায় লরি-ট্রাক চালকদের আন্দোলনে সামিল না-হওয়ার খেসারত মার খেয়ে দিতে হচ্ছে বাসচালকদের। এই অভিযোগ তুলে আগাম কোনও ঘোষণা ছাড়াই সোমবার আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হলো বর্ধমান শহরের বিভিন্ন রুটের বাস। যার জেরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় নিত্যযাত্রী থেকে স্কুলপড়ুয়াদের।

সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামান্য দূরত্বের রাস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেন একশ্রেণির অসাধু টোটোচালক। কোথাও কোথাও তাঁরা ভাড়া হাঁকিয়েছেন ২০০ টাকাও। এক-একটি টোটোয় ১০-১২ জন করে যাত্রী তোলাও হয়েছে এদিন।

হিট অ্যান্ড রানে নতুন যে আইন পাশ হয়েছে তা মানতে নারাজ অধিকাংশ ট্রাক-লরির চালকরা। মাঝেমধ্যেই তাঁরা পথ অবরোধ, ধর্মঘট করছেন। জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে একই ইস্যুতে ধর্মঘট চলাকালীন রায়নায় এসবিএসটিসি-র বাস নিয়ে নিয়ে বেরিয়েছিলেন এক চালক। অভিযোগ, তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে মারধর করে একদল বিক্ষোভকারী।

তৃণমূল প্রভাবিত বাস শ্রমিক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক মিলন দাস বলেন, ‘আমরা ধর্মঘটের বিরোধী। কিন্তু বাসচালকরা মার খাওয়ার ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন না। খালেরপুল, বাঁকুড়া মোড়, সগড়াই— এসব জায়গায় বাস থামিয়ে লরির ড্রাইভাররা বাসচালকদের মারধর করছে। দলগত ভাবে পুলিশের কাছেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ সে ভাবে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় ড্রাইভাররা নিজেদের বাঁচাতে বাস নিয়ে বেরোচ্ছেন না।’ লরিচালকদের ইউনিয়নের কোনও সদস্য ফোন না-ধরায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

প্রশাসনের কী বক্তব্য? বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমাশাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘বাসচালকদের মারধরের কোনও অভিযোগ আমাদের দপ্তরে জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলব।’ জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘আমাদের কাছে নির্দিষ্ট ভাবে কেউ অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। গলসি থানা এলাকায় এ ভাবেই বাস আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে।’

বাসচালকদেরও কড়া বার্তা দিয়েছেন এসপি। তাঁর বক্তব্য, ‘এ ভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। কারও কোনও বক্তব্য থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বাস বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ চলবে না।’ এদিকে, এদিন আচমকা বাস ধর্মঘটের জেরে অনেকে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টোটোয় যাতায়াত করেছেন। তেলিপুকুর থেকে সেহারাবাজার, কাঁইতি, সগড়াই মোড়, বাঁকুড়া মোড় যেতে মাথা পিছু ৫০ থেকে ২০০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছেন টোটোচালকরা।

বর্ধমান থেকে আসা সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘ট্রেনে বর্ধমানে এসে শুনলাম টাউন সার্ভিস বাস চলছে না। মেয়েকে নিয়ে টোটো করে তেলিপুকুর এলাম ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে। দক্ষিণ দামোদর রুটের বাসও নেই শুনে ফের একটা টোটো ঠিক করলাম। ২০০ টাকা করে কাঁইতি অবধি ভাড়া। সেহারাবাজারের কাছে এসে টোটোচালক নামিয়ে দিল। ফের অন্য কিছুর সন্ধান করতে হলো।’

Burdwan Kolkata Bus : বর্ধমান-কলকাতা প্রথম ও শেষ বাস কখন? রইল একগুচ্ছ রুটে পরিষেবার সময়সূচি
তাঁর প্রশ্ন, ‘এ ভাবে বাস বন্ধ করে দিয়ে আমাদের বিপদের মুখে ফেলে কী লাভ হচ্ছে?’ ছাত্রছাত্রীদের থেকে উচালন থেকে সেহারাবাজার পর্যন্ত বাসের ভাড়া নেওয়া হয় ৫ টাকা। সুমন সর্দার নামে এক ছাত্র বলেন, ‘বাসে ১০ টাকা আসা-যাওয়ার খরচ। কিন্তু টোটোয় উচালন থেকে সেহারাবাজার আসা-যাওয়ায় ৪০ টাকা ভাড়া। এমন হলে আর পড়তে যেতে পারব না।’

বর্ধমানে বাস ধর্মঘটের প্রভাব এদিন দুর্গাপুরেও পড়ে। বর্ধমান থেকে বরাকর বা আসানসোল ভায়া দুর্গাপুর রুটে বাস না-চলায় ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরা। সিটি সেন্টার বাস স্ট্যান্ডে বহু যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। অবশ্য সরকারি বাস চলেছে, তাতে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version