এই সময়: নিজের চার বছরের ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ডেটা সায়েন্টিস্ট সূচনা শেঠের বিরুদ্ধে। বেঙ্গালুরুতে থাকলেও সূচনা আদতে কলকাতারই বাসিন্দা। উত্তর চব্বিশ পরগণার আড়িয়াদহের রায়গড়ে তাঁর জন্ম, পড়াশোনা এবং বিয়ে। বর্তমানে তাঁদের সেই বাড়িতে থাকেন মামা ও মাসিরা। ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী বলে পরিচিত সূচনা কীভাবে এমন একটা ঘটনা ঘটালেন, তা কল্পনাও করতে পারছেন না তাঁরা।

পড়াশোনা অন্তপ্রাণ এবং নিজের মতোই থাকতে পছন্দ করা সূচনা যে এ ভাবে সন্তানকে খুন করতে পারে সে কথা ভাবলে অবাক হয়ে যাচ্ছেন পাড়া-প্রতিবেশীরাও। সূচনার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্ম কলকাতায় হলেও বাবার চাকরির সূত্রে সূচনাকে চলে যেতে হয়েছিল চেন্নাইয়ে। সেখানে তাঁর স্কুলিং। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়।

ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হন ভবানীপুর সোসাইটি কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক হওয়ার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সও করেন। পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সংস্কৃতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাও কমপ্লিট করেন তিনি। গোয়াতে এই ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারেন সূচনার মাসি পারমিতা গুহ এবং মেসো কৌস্তভ গুহ।

Suchana Seth : ‘ছেলেকে খুন করিনি’, পুলিশের কাছে দাবি হার্ভার্ডের বিজ্ঞানী সূচনার
কৌস্তভের কথায়, ‘আমি প্রচুর নিউজ সার্ফ করি। আচমকা এই নিউজটা দেখলাম। সূচনা শেঠের নাম দেখে চোখটা আটকে গেল। আরও ডিটেলে তখন জানতে শুরু করি।’ কৌস্তভের প্রতিক্রিয়া, ‘এই ঘটনা আমাকে স্টানড করে দিয়েছে। কনফার্ম হওয়ার পরে আমরা শকড। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে আমাদের চিন্তার বাইরে। মা আর সন্তান, এর থেকে বড় সম্পর্ক তো আর নেই।’

মাসি পারমিতাও ভাবতেই পারছেন না সূচনা এমন ঘটনা আদৌ ঘটাতে পারেন বলে। তিনি বলেন, ‘শেষবার ২০২১ সালে দেখা হয়েছিল যখন ওর মা মারা যান। স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে সূচনা আড়িয়াদহে এসেছিলেন মায়ের পারলৌকিক কাজ করতে। এমন ঘটনা যে ঘটাতে পারে সেটা আমাদের স্বপ্নের অতীত। পড়াশোনায় খুবই ভালো। বিভিন্ন কুইজে অংশ নিত। খুব হইহই করত এমন নয়। তবে ব্যবহার ভালো ছিল।’

সংবাদমাধ্যমের তরফে এ দিন সূচনার বাবার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এখনই মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে চান না বলে জানান। সূচনার মামি এ দিন বলেন, ‘ওঁর বাবার মনের অবস্থাটা একবার বোঝার চেষ্টা করুন। নাতি চলে গিয়েছে। জামাইয়ের বিপর্যস্ত অবস্থা।’

হার্ভার্ডের বিজ্ঞানী সূচনা কলকাতার মেয়ে, নজরকাড়া ক্যারিয়র! জানলে চমকে উঠবেন
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শেষ করার পরে সূচনা বিদেশে পাড়ি দেন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে গত ১৫ বছর ধরে বেঙ্গালুরুতেই থাকছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ২০০৯-১০ সালে সম্বন্ধ দেখে বিয়ে হয়। বিয়ের আসর বসেছিল আড়িয়াদহতেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূচনাকে পড়িয়েছেন ফিজিক্সের অধ্যাপক সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর কথায়, ‘মেধাবী ছাত্রী হিসেবেই ওঁকে চিনতাম। ক্লাসে খুব একটা ইন্টার‍্যাক্ট করত না। পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে শিক্ষক এবং অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্কও ছিল। অত্যন্ত সিনসিয়ার একটি মেয়ে এ ভাবে যে কী করে একটি ঘটনা ঘটাল সেটা আমরা কেউই বুঝতে পারছি না।’

ওই সময়েই সূচনার ব্যাচমেট ছিলেন বর্তমানে কলেজের শিক্ষক সঞ্চারি গোস্বামী। তিনিও হাসিখুশি মেয়ে হিসেবেই বর্ণনা করছেন সূচনাকে। বলছেন, ‘অন্যদের মতো বুঝতে পারছি না, কীভাবে এমন একটি ঘটনা সে ঘটিয়ে দিল!’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version