প্রদ্যুৎ দাস: মহিলাদের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উত্তরবঙ্গে এই প্রথম সরকারি খরচে তৈরি হলো ইকো টুরিজম হাব।

দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি বিজড়িত জলপাইগুড়ি বৈকন্ঠপুর বনাঞ্চল। সেই স্মৃতিকে সামনে রেখে এবং এলাকায় কর্মসংস্থানের লক্ষে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রাম পঞ্চায়েতের তিস্তা নদীর কোলে গৌড়ি কোন এলাকায় তৈরী করা হয়েছে আনন্দমঠ ইকো টুরিজম হাব।  

এই হাবের উদ্বোধন করের অতিরিক্ত জেলা শাসক তেজস্বী রানা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাপরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ মহুয়া গোপ, শিক্ষা কর্মাধক্ষ প্রনয়িতা দাস সহ একাধিক সরকারি আধিকারিক এবং বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানরা।

জানা গিয়েছে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এবং জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পিএনআরডি সহ একাধিক দফতরের আর্থিক সাহায্যে গড়ে উঠেছে এই ইকো-ট্যুরিজম হাব। 

এখানে আপাতত তৈরী করা হয়েছে তিনটি কটেজ। আগামীতে এখানে আরও বেশ কয়েকটি কটেজ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই নতুন একেকটি  কটেজে চারজন পর্যন্ত থাকতে পারবে। আর একদিন থাকা খাওয়ার জন্য জনপ্রতি মাত্র ১২০০ টাকা দিলেই হবে। সবটাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পরিচালনা করবেন।

আরও পড়ুন: Hooghly: তৈরি হল নতুন রাস্তা, তবুও ৩ দিনেই হাত দিয়ে পিচ তুলে ফেলছেন গ্রামবাসীরা

এখানে বিশাল আকারে অর্গানিক ফার্ম তৈরী করা হচ্ছে। সেখানকার শাকসবজি ব্যাবহার করেই পর্যটক ও রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে। বিশাল আকারে পুকুর কাটা হচ্ছে যেখানে বোটিং-এর ব্যাবস্থা থাকবে। মাছ চাষ করা হবে। স্থানীয় মহিলারা এখানেই ঢেকি ছাঁটা চাল তৈরি করে প্যাকেটিং করবে। এখানেই মুড়ি ভাজা হবে। এছাড়া ডে ভিজিটারদের জন্য রেস্টুরেন্ট করা হবে। যা এই এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র অনেকটাই পাল্টাতে সক্ষম হবে বলে দাবী পঞ্চায়েত সদস্যদের।

বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল ভবানী পাঠক এবং দেবী চৌধুরানী ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠকের গোপন ডেরা। যা শিকারপুর দেবী চৌধুরানী মন্দির নামে পরিচিত। রয়েছে দিল্লি ভিটা চাঁদের খাল যা সন্যাসী বিদ্রোহের আঁতুড়ঘড় বলে দাবী গবেষকদের। তাই এখানে এলে এইসব ইতিহাস মানুষ জানতে পারবে।

শুধু এইসব নয় তিস্তা পারের গৌড়ি কোনে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায়। আবার ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে রয়েছে সতী পিঠের একপিঠ ভ্রামরী দেবীর মন্দির। রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন গৌড়ি কোন মন্দির। এই সব জায়গাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ইকো ট্যুরিজম স্পট তৈরি করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিল স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। যা এতদিনে সাফল্যের মুখ দেখল।

আরও পড়ুন: Bankura: হাতির হানায় মৃত এক, বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের

অতিরিক্ত জেলাশাসক তেজস্মী রানা জানিয়েছেন, ‘গ্রামপঞ্চায়েতের উদ্যোগে এটা একটা বিরাট কর্মকাণ্ড, যা এই এলাকার পর্যটন মানচিত্রে ছাপ ফেলবে। একইসঙ্গে এখানে প্রচুর পরিমানে কর্মসংস্থান হবে। এলাকার উন্নতি হবে’।

SJDA এর সদস্য তথা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপ প্রধান কৃষ্ণ দাস জানান, ‘এই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকের ঐতিহাসিক পটভূমিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আরও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গ্রামপঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। যা আজ আংশিক রূপ নিয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে পর্যটকেরা আসলে একসঙ্গে উত্তরবঙ্গের কৃষ্টি সংস্কৃতি সহ অনেক কিছু জানতে পারবেন। আগামী এক বছরে এখানে আরও রিসর্ট করা হবে। করা হবে রেস্টুরেন্ট। পর্যটন মানচিত্রে এর প্রভাব পড়বে’।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version